ফোন করলেই ‘ঘোড়া’ হাজির, রাতে ফিরছে ‘আস্তাবলে’

ভোটের বাজারে ওই দুইয়ের কদর কয়েক’শো গুণ বেড়ে গিয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “ইতিমধ্যেই প্রচুর বেআইনি অস্ত্র আমরা উদ্ধার করেছি। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। এমন অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩১
Share:

গত তিন মাসে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ১০টি। এর মধ্যে পাইপগান, নাইনএম, সিক্স রাউন্ড এবং সেভেন পয়েন্ট সিক্স পাইপ এমএম রয়েছে।

ফোন কলেই ‘ঘোড়া’ এসে হাজির। খুরের আওয়াজ নেই। চিঁহি ডাক নেই। শুধু ইশারায় এক হাত থেকে আরেক হাতে বদল হয়ে যাচ্ছে ‘ঘোড়া’র মালিকানা। যদিও তা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। ফের সন্ধের পরে ঘোড়া ফিরে আসছে ‘আস্তাবলে’, আসল মালিকের হাতে। কেউ কেউ আবার ‘ঘোড়া’ ভাড়া নিয়েছে এক মাসের জন্য। কোচবিহারে এখন ব্যাপক হারে ভাড়ায় খাটছে ‘ঘোড়া’। সেই সঙ্গে আলাদা ভাবে বিক্রি হচ্ছে ‘ঘোড়ার বিচি’।

Advertisement

‘ঘোড়া’ মানে বন্দুক ও পিস্তল, আর ‘বিচি’ মানে গুলি।

ভোটের বাজারে ওই দুইয়ের কদর কয়েক’শো গুণ বেড়ে গিয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “ইতিমধ্যেই প্রচুর বেআইনি অস্ত্র আমরা উদ্ধার করেছি। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। এমন অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

কেমন করে চলছে এই কারবার? কোচবিহার শহর তো বটেই, শহরতলি টাকাগাছ, ডাউয়াগুড়ি এলাকায় অস্ত্রকারবারীদের রমরমা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় কারবারিদের ঘাঁটি রয়েছে। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, এই কারবারিদের হাতে পাইপগানের পাশাপাশি, ছয় ঘোড়ার পিস্তল (সিক্স রাউন্ড) থেকে শুরু করে আধুনিক নাইন এমএম, সেভেন পয়েন্ট সিক্স এমএম পিস্তল রয়েছে। মান অনুযায়ী ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। একটি ‘পাইপগান’ ৩০০ টাকায় ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সিক্স রাউন্ডের ৪০০ টাকা। আর আধুনিক মানের পিস্তল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়ায় পাওয়ায় যাচ্ছে। ফোন মোবাইলেই ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই সব ব্যবসায়ীদের নম্বর। অবশ্য একটু পরিচিত ছাড়া চট করে ধরা দিচ্ছে না কারবারিরা। পরিচিতের হাত ধরে সন্ধের পরে রেলস্টেশন লাগোয়া এলাকা, কখনও ব্লক অফিসের কাছাকাছি কোনও জায়গায়ব হাত-বদল হয়ে যাচ্ছে অস্ত্র। গুলি অবশ্য কিনে নিতে হচ্ছে। একটি দু’শো টাকা।

রাজনৈতিক সংঘর্ষ

• ৪ এপ্রিল-কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে গুলি চালানোর অভিযোগ।

• ২৬ মার্চ-দিনহাটার গীতালদহে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ১।

• ১ মার্চ-চান্দামারিতে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ ১।

• ২৫ ফেব্রুয়ারি-তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে হাড়িভাঙ্গায় গুলি-বোমা ছোড়ার অভিযোগ।

• ৩ ফেব্রুয়ারি-রাজারহাট রসেরকুঠিতে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ।

বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজ্যের শাসক দলের কর্মীরা। ওই অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপশি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ওই অস্ত্র কোথা থেকে কী ভাবে আসছে তা তদন্ত করে দেখা উচিত।”

পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, পাইপগান তৈরি হচ্ছে কোচবিহারেই। বাকি অস্ত্র আসছে বিহারের মুঙ্গের থেকে।

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিজেপির কিছু দুষ্কৃতীর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র আছে। আমরা সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন