চৈত্রেই রাত জাগা শুরু পাহাড়ে

বিনয় বলেন, ‘‘দার্জিলিঙে পানীয় জলের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সব ক’টি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা দরকার। রাজ্যের কাছে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য জোর দিতে হবে।’’

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০১:৫১
Share:

ভার: গরম পড়তেই জলের ভার টেনে চলছেন পাহাড়ের মহিলারা। পৌঁছে দিতে হবে বাড়ি বাড়ি, হোটেলে। নিজস্ব চিত্র

সবে চৈত্র পড়েছে। গরম এখনও পড়েনি। কিন্তু, ভোরের আলো ফোটার আগেই পাহাড়ি ঝোরার সামনে পাত্র হাতে লাইনে দাঁড়াতে রাত জাগা শুরু হয়েছে পাহাড়ে।

Advertisement

দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, কার্শিয়াং, সর্বত্রই একই ছবি। কারণ, পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। শহরবাসীরা জলকষ্ট সহ্য করলেও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের তো আর বিপাকে ফেলা যাবে না। তাই প্রায় মাঝ রাত থেকে শহরের আশেপাশের ঝোরায় গিয়ে ট্যাঙ্কার, জলের টিন ভরতে শুরু করে দেন জল সরবরাহকারীরা। বিভিন্ন হোটেলে জল সরবরাহের দায়িত্ব তো তাঁদেরই। জল কিনে খাওযার সামর্থ্য নেই বলে লাইনে সামিল হন পাহাড়বাসী শিল্পা তামাঙ্গ, সুবেশ প্রধান, সরিতা বিশ্বকর্মারা।

শিল্পা দার্জিলিঙের একটি মোবাইলের শো-রুমে চাকরি করেন। সুবেশ কলেজে পড়েন। সরিতা স্নাতক হয়ে চাকরির খোঁজ করছেন। শিল্পা বলেন, ‘‘সংসার অনেকটাই আমার কাঁধে। তাই ৩০ টাকা টিন (৩০ লিটার) জল কেনা সম্ভব নয়। সকালে উঠে যতটা সম্ভব জল ভরে রাখি।’’

Advertisement

ফি গ্রীষ্মেই জলকষ্টে ভোগে দার্জিলিং পাহাড়। জিটিএ-এর কেয়ারটেকার চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গ, ভাইস চেয়ারম্যান অনীত থাপারাও তা হাড়ে হাড়ে বোঝেন। সমস্যা নিয়ে ওয়াকিবহাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মঙ্গলবার হুগলির গুড়াপের প্রশাসনিক সভাতেও পাহাড়ের জল সমস্যার কথা উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে। রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের তিনি বলেন, ‘‘দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পঙে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে জোর দাও। ওখানে জলের সঙ্কট রয়েছে। আমি দেখেছি।’’

বিনয় বলেন, ‘‘দার্জিলিঙে পানীয় জলের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সব ক’টি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা দরকার। রাজ্যের কাছে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য জোর দিতে হবে।’’

পুরসভা ও প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াঙে শহর এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের যে ব্যবস্থা রয়েছে তা মূলত ইংরেজ আমলের। সে সময়ে ২৫-৩০ হাজার জনসংখ্যার জন্য ওই প্রকল্প তৈরি হয়। পর্যায়ক্রমে পরিকাঠামো বাড়ে। দার্জিলিঙে সিঞ্চল লেক, কালিম্পঙে ডেলোর জলাধার, কার্শিয়াঙে জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্রকল্প থেকে পানীয় জল সরবরাহ হয়ে থাকে। কিন্তু গ্রীষ্মের সময়ে লেকের জলস্তর নেমে যায়। ঝোরার জলধারাও ক্ষীণ হয়ে যায়। পুরসভা জানাচ্ছে, দার্জিলিং শহরের কাছেপিঠের ২০টি ঝোরার জল ব্যবহার করেন বাসিন্দারা। এপ্রিল-মে মাসে ৭-৮টি ঝোরা শুকিয়ে যায় বলে সরবরাহে টান পড়ে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবব্রত মিত্র বলেন, ‘‘বালাসুন প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হলেই পাহাড়ের জল সমস্যা অনেকটা মিটে যাবে।’’ বৃষ্টির জল ধরে রাখার চেষ্টার উপরেও জোর দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন