মর্টার শেল এল কোথা থেকে, তদন্তে সেনা

মহানন্দার খালের ধার থেকে উদ্ধার হওয়া মর্টার শেলগুলো কোথা থেকে কী ভাবে খালের ধারে এল তা জানতে এ বার তদন্তে নামল সেনা গোয়েন্দারা। ২২ নভেম্বর শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়ার নিজবাজার থেকে চারটি তাজা মর্টার শেল উদ্ধার হয়।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:০২
Share:

অস্ত্র: সেই মর্টার। ফাইল চিত্র

মহানন্দার খালের ধার থেকে উদ্ধার হওয়া মর্টার শেলগুলো কোথা থেকে কী ভাবে খালের ধারে এল তা জানতে এ বার তদন্তে নামল সেনা গোয়েন্দারা। ২২ নভেম্বর শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়ার নিজবাজার থেকে চারটি তাজা মর্টার শেল উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাটি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় প্রথমেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিএসএফের অফিসারেরা।

Advertisement

তারপরে সিআইডি থেকে কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরপর তদন্ত শুরু করে। কিন্তু কোথা থেকে সেগুলো এল তা নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য। কারা, কী উদ্দেশ্যে খালের ধারে ওই মর্টার শেল রেখেছিলেন তা এখনও অধরা। আর তা উদ্ধারের জন্য জেলা পুলিশ এবার দ্বারস্থ হল সেনাবাহিনীর।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পরে সেনা অফিসারেরা জানিয়ে দেন মর্টারগুলো ভারতের তৈরি। কী ধরনের মর্টার, তা ক্যারিয়রের নম্বর থেকে স্পষ্ট হলেও সেগুলো কোন বাহিনীর, তা এখনও বোঝা যায়নি। কারণ, মর্টার ক্যারিয়ারের ভিতরের সাঁটা নথি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সন্দেহ, পাচারের উদ্দেশ্যেই সম্ভবত তা খালের সেতুর নীচে জড়ো করা হয়েছিল। মর্টার শেলগুলো চুরি বলে একপ্রকার নিশ্চিত বিভিন্ন সংস্থার অফিসারেরা। এই ধরনের অস্ত্র খোয়া গেলে তা ‘মিসিং আইটেম’ হিসাবে নথিভুক্ত হওয়ার কথা। যা কেউ করেননি বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

এই বিষয়টি মাথায় রেখে কোথা থেকে তা চুরি হয়েছে তা বার করার চেষ্টা করেন সিআইডি থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। প্রাথমিকভাবে কোনও সূত্র না মেলায় তারা একটি রিপোর্ট দার্জিলিং জেলা পুলিশকে দিয়েছে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে কয়েকদিন আগে জেলা পুলিশ সুপার অখিলেশ চর্তুবেদি সেনা বাহিনীর সুকনার সদর দফতর ৩৩ কোরে চিঠি পাঠিয়ে মর্টারগুলো কোথাকার তা তদন্ত করে জানানোর জন্য বলেছেন। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘মর্টার শেল কোথাকার তা জানলে তদন্তে আরও এগোবে। তাই আমরা সেনা বাহিনীকে চিঠি পাঠিয়েছি। এখনও সেনার তরফে কিছু জানানো হয়নি।’’

সেনা সূত্রের খবর, ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। পুলিশের চিঠির পর ফের তা মন্ত্রকে জানানো হয়েছে। সেনা ছাড়াও বিএসএফ, সিআরপিএফের কাছেও এই ধরনের মর্টার শেল থাকে। অন্তত পাঁচ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে মর্টার শেলগুলোর। চিন, পাকিস্তান সীমান্তে বাহিনী এগুলো প্রায়শই ব্যবহার করে। বাংলাদেশ সীমান্তে কোথায় কোথায় তা পাঠানো হয়েছিল তা তালিকা ধরে খোঁজা শুরু হয়েছে। তেমনিই, উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জঙ্গি উপদ্রুত এলাকায় সেনা বাহিনী বা স্পেশাল টাক্স ফোর্সের কাছে এই মর্টার শেল থাকে। সেরকমই কোনও জায়গা থেকে এসব চুরি করে পাচারের চেষ্টা হয়েছে কি না তা জানা অত্যন্ত জরুরি।

সুকনা সেনা বাহিনীর এক কর্তা জানান, মহানন্দা খালের জলে উদ্ধারের ৩০ ঘণ্টা পরে মর্টার শেলগুলো নিষ্ক্রিয় করার সময়ই পুলিশ ও সাধারণ বাসিন্দারা সেগুলোর শক্তির অনুমান করেছেন। তাই এমন শক্তিশালী অস্ত্র কারা, কেন এবং কাকে পাচারের চেষ্টা করছিল তা জানতে হবে। গোটা দেশে যাদের হাতে ওই মর্টার শেল রয়েছে, তাদের প্রতিটি ইউনিটকে চিঠি দিয়ে খোঁজখবর করা হচ্ছে। সেখানে কোথাও সন্দেহ দেখা দিলেই সরজমিনে খোঁজখবর শুরু হবে বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন