গুলিবিদ্ধ বিপ্লবের আজ মাধ্যমিক

মাস পাঁচেক আগের কথা। দাড়িভিট স্কুল ও তার সামনে শুরু হয়েছে জোরদার আন্দোলন। চলল গুলি। একটি গুলি গিয়ে লেগেছিল বিপ্লব সরকার নামে এক কিশোরের পায়ে।

Advertisement

অভিজিৎ পাল

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৯
Share:

প্রস্তুতি: পরীক্ষার আগে বাড়িতে বিপ্লব। নিজস্ব চিত্র

মাস পাঁচেক আগের কথা। দাড়িভিট স্কুল ও তার সামনে শুরু হয়েছে জোরদার আন্দোলন। চলল গুলি। একটি গুলি গিয়ে লেগেছিল বিপ্লব সরকার নামে এক কিশোরের পায়ে। ডান পায়ে হাঁটুর সামান্য নীচে গুলি পা ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। গলগল করে রক্ত বেরোতে শুরু করে। মাটিতে পড়ে যায় বিপ্লব।

Advertisement

তখন কেউ ভাবতে পারেননি, দশম শ্রেণির ছাত্র বিপ্লব এ বার মাধ্যমিক দিতে পারবে। কিন্তু জখম অবস্থাতেই বিপ্লব নভেম্বরে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা দেয়। তাতে সে পঞ্চাশ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়ে পাশ করে বলে বিপ্লবই জানিয়েছে। তারপরে এখন সে মাধ্যমিকের জন্যও প্রস্তুত। আজ, মঙ্গলবার সে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে গুঞ্জুরিয়ার পাঁচরসিয়া হাইস্কুলে। সেখানেই আসন পড়েছে দাড়িভিট হাইস্কুলের। দাড়িভিট স্কুল থেকে এ বার পরীক্ষা দিচ্ছে ২৫৪ জন ছাত্রছাত্রী।

এসএফআই বিপ্লবকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌছে দেওয়ার কথা বলেছিল। বিপ্লব তাদের সঙ্গে যেতে চায়নি। এলাকার ছাত্ররা মিলে একটি গাড়ি ভাড়া করেছে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য তাদের সঙ্গেই যাবে বিপ্লব।

Advertisement

বাড়ির অনেকে এবং পরিজনেরাও বিপ্লবকে বারণ করেছিল এ বার পরীক্ষা দিতে। কেননা, শুধু যে সে গুরুতর জখম হয়েছে তাই নয়, সেই ২০ সেপ্টেম্বর থেকে দফায় দফায় এই স্কুল নিয়ো গোলমাল হয়েছে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। খোলার পরেও উত্তেজনা কমেনি। আন্দোলনের ক্ষেত্রে বারবার ডাক পড়েছে বিপ্লবেরও। তাতে তার পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিপ্লব পরীক্ষা দিতে রাজি। সে বলে, ‘‘ঠিক করে পড়াশোনা করতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু একটি বছর নষ্টও করতে চাইনি।’’

এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ নয় বিপ্লব। গুলির ক্ষতর জন্য ওষুধ খেতে হচ্ছে। দিন ১৫ আগে ফের চেন্নাই থেকে চিকিৎসা করিয়ে এসেছে। আরও একটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। মাধ্যমিকের জন্য সেই অস্ত্রোপচারও পিছিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। মঙ্গলবার মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষা, তবে সোমবারও জ্বর রয়েছে বিপ্লবের।

তাই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তার পরিবারের লোকেরা। জ্বর গায়েই শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। পরীক্ষা কেমন হবে, তা নিয়েও ভয়ে ভয়ে রয়েছে সে। বিপ্লব বলেছে, ‘‘গুলির ঘটনার পর পরীক্ষার আগে দীর্ঘ দিন অসুস্থই ছিলাম। এখন ভয় করছে।’’ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিল মণ্ডল বলেন, ‘‘ওর ভয় অযৌক্তিক নয়। ওর উপর দিয়ে যা গেল, তাতে পড়াশোনায় প্রয়োজনীয় মন দিতে পারা সত্যিই শক্ত।’’ বিপ্লবের মা সরস্বতীদেবী বলেন, ‘‘বারবার বলেছিলাম পরের বছর পরীক্ষার বসার জন্য। কিন্তু একটা বছর নষ্ট করতে চায়নি ছেলে। পড়াশোনাতে ও খুবই ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন