দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র বাণিজ্য কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা এক টিএমসিপি নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ ওই ছাত্র নেতাকে ধরা হয়।
পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম শঙ্কর চন্দ। শুরুতে ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও পরবর্তীতে তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদে যোগ দেন। ছাত্র নেতার সঙ্গে শহরের একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর ভালবাসার সম্পর্ক ছিল বলে পুলিশের দাবি। মাসখানেক আগে ওই ছাত্রী ওড়নার ফাঁসে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রায় একমাস চিকিৎসাধীন থাকার পরে গত মঙ্গলবার ছাত্রীটির মৃত্যু হয়। এরপরেই গত বুধবার রাতে পরিবারের তরফে ছাত্র নেতা শঙ্করের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা দায়ের করে, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার মহিলা সেলের ওসি কে এল শেরপা বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ধৃত যুবকের সঙ্গে ছাত্রীর প্রায় তিন বছরের প্রেম ছিল। যুবকটি কোনও কারণে সম্পর্ক রাখতে অস্বীকার করলে, ছাত্রীটি মানসিক অবসাদে ভুগে আত্মহত্যা করে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
ধৃত শঙ্কর চন্দ ছাত্রীর বাড়ির অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করেননি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, “আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। আমরা ওই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করব না।” জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শঙ্কর তৃণমূল ছাত্র পরিষদে যোগ দিলেও পরবর্তীতে ছাত্র অথবা যুব সংগঠনের সঙ্গে সে ভাবে যোগাযোগ রাখত না। অন্যায় করে থাকলে শাস্তি ভোগ করতে হবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিন বছর আগে শহরের নতুন পাড়ার বাসিন্দা শঙ্করের সঙ্গে লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর সম্পর্ক তৈরি হয়। গত জানুয়ারি মাস থেকে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রীটি বাড়িতে ওড়নার ফাঁসে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরিবারের সদস্যরা ছাত্রীকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে প্রায় এক মাস চিকিৎসা চলে। গত ২৪ মার্চ দুপুর নাগাদ ছাত্রীর মৃত্যু হয়। ছাত্রীর বাবা পেশায় রাজ্য সরকারি কর্মী। তাঁর দাবি, আত্মহত্যার চেষ্টার পরে ভালবাসার বিষয়টি পরিবারের নজরে আসে। মৃতা ছাত্রীর দাদা অভিযোগ করে বলেন, “বোনের মৃত্যুর জন্য শঙ্কর দায়ী। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে বোনকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে শঙ্কর।”
জলপাইগুড়ি হাসপাতালের সুপার পার্থ দে বলেন, “ছাত্রীটি প্রায় এক মাস ভেন্টিলেশনে ছিল। তার চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থাই করা হয়েছে। তবে তাকে বাঁচানো যায়নি।” শঙ্করকে গ্রেফতারের খবর পেয়ে এদিন ছাত্রীর পাড়ার লোকজন কোতোয়ালি থানায় ভিড় করেন। থানার সামনে বিক্ষোভও জানান তাঁরা। ধৃত যুবককে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিও জানায়। পুলিশ জানায়, রাতে অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে গেলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ শঙ্কর গোপনে বাড়িতে ঢুকলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
ছাত্রীর পরিবার থেকে এ দিন মৌখিকভাবে ধৃতের বিরুদ্ধে মোবাইল ফোনে আপত্তিজনক ছবি তোলার অভিযোগ তোলা হলেও, লিখিত অভিযোগপত্রে তা উল্লেখ করা হয়নি। কোতোয়ালি থানার মহিলা সেলের ওসি বলেন, “পরিবারের লোকজন মোবাইলে ছাত্রীর আপত্তিজনক ছবি তোলার অভিযোগ করেছেন। ওঁদের কাছে প্রমাণ চাওয়া হয়েছে। তদন্তে ওই বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” শঙ্করবাবু ও ওই ছাত্রীর মোবাইলও জমা নিয়েছে পুলিশ।