ছাত্রী-মৃত্যুর কারণ খুঁজতে তদন্ত কমিটি ইটাহার কলেজে

উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের ডক্টর মেঘনাদ সাহা কলেজের মহিলা শৌচাগারে এক ছাত্রীর অপমৃত্যুর ঘটনার পিছনে কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না, তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা ঘোষণা করলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:১৮
Share:

উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের ডক্টর মেঘনাদ সাহা কলেজের মহিলা শৌচাগারে এক ছাত্রীর অপমৃত্যুর ঘটনার পিছনে কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না, তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা ঘোষণা করলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত কলেজের প্রশাসক তথা রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অশোক দাস।

ওই ছাত্রীকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে ওই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে এ দিন রায়গঞ্জের শনিমন্দির এলাকা থেকে সুপারমার্কেট পর্যন্ত মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন সিপিএমের ছাত্র যুব ও মহিলা সংগঠন এসএফআই, ডিওয়াইএফ ও গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সমর্থকেরা।

Advertisement

পাশাপাশি, এ দিন কালিয়াগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ পীযূষ দাসও জেলাশাসকের কাছে লিখিত ভাবে ওই ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। পৃথক ভাবে একই দাবি তুলেছেন মেঘনাদ সাহা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা তথা ইটাহারের প্রাক্তন সিপিআই বিধায়ক শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়ও।

উল্লেখ্য, ঘটনার দিন মৃত ওই ছাত্রীর পোশাকের ভিতর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়। পুলিশের দাবি, সেখানে ওই ছাত্রী লিখেছেন, গত বুধবার পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে নকল করার অপরাধে শিক্ষকেরা তাঁর টুকলি ও খাতা কেড়ে নেন। তিনি বার বার খাতা ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা খাতা ফেরত দেননি। শিক্ষকেরা ক্ষমা না করায় তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন।

জেলাশাসক রণধীর কুমার এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌরের দাবি, সুইসাইড নোটে হাতের লেখা ওই ছাত্রীর কি না, তা জানতে তদন্ত চলছে।

মৃতার পরিবারের তরফে কারও বিরুদ্ধে পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানানো হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত পুলিশ মৃতার ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ ইটাহারের ডক্টর মেঘনাদ সাহা কলেজের মহিলা শৌচাগার থেকে সাবিনা ইয়াসমিন (২১) নামে হেমতাবাদের আরাজি কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তিনি কালিয়াগঞ্জ কলেজের অঙ্কের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। গত বুধবার মেঘনাদ সাহা কলেজে স্নাতক বিষয়ের পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি।

কলেজের প্রশাসক অশোকবাবুর দাবি, কলেজে তালা লাগানোর আগে বিভিন্ন ক্লাসরুম ও বাইরে থেকে শৌচাগারে নজরদারি চালানোই নিয়ম নিরাপত্তারক্ষীদের। গত বুধবার কোনও নিরাপত্তারক্ষী কেন শৌচাগারে কেউ আছে কি না তা খেয়াল না করেই বন্ধ করে দিলেন, তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক কার্তিক দাস, কালিয়াগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ পীযূষ দাস ও ইটাহারের প্রাক্তন বিধায়ক শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায় পৃথক ভাবে দাবি করেন, ওই ছাত্রীকে সুপরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। শ্রীকুমারবাবু বলেন, ‘‘কারণ, তাঁর মৃতদেহটি ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হলেও পা দু’টি মাটিতে ঠেকানো অবস্থায় ছিল। তা ছাড়া ওই ছাত্রীর পক্ষে খোলা থাকা শৌচাগারের দরজার উপরে থাকা প্রায় সাড়ে সাত ফুট উঁচু লিন্টনে ওড়না বাঁধা অসম্ভব বলে মনে করছি। তার জন্যই আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’’

সাবিনার বাবা মহম্মদ ইশাহাক বলেন, ‘‘আমরা আলাদা করে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করিনি! পুলিশ কেন তদন্ত করে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে মামলা দায়ের করছে না, সেটাই আমরা বুঝতে পারছি না।’’

ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক অমল আচার্য বলেন, ‘‘পুলিশকে উপযুক্ত তদন্ত করার অনুরোধ করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন