বৃষ্টির পরে রোদ বেরোতেই ধান শুকোতে দেওয়া হয়েছে। দোমহনি এলাকায় দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।
তিস্তার জলস্তর নতুন করে না বাড়লেও এখনও বন্যার ভ্রূকুটি কাটেনি। শুক্রবার বিকেলে জলস্তর সামান্য কমেছে। তবে ত্রাণ শিবিরে আশ্রিতরা ঘরে ফিরে যেতে পারেননি। স্রোতের দাপট দেখে এ দিন তাঁবুর সংখ্যা বাড়াতে হয়েছে প্রশাসনকে। ভাঙন শুরু হয়েছে জেলা পরিষদের তৈরি রাস্তায়। সেচ দফতর ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরু করেছে।
মঙ্গলবার রাতভর সিকিম পাহাড়ে বৃষ্টিপাতের ফলে বুধবার ডুবে যায় তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকা ও চর দখল করে সম্প্রসারিত বসতি-সহ চাষের মাঠ। বুধবার রাতে পাহাড়ে তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে জলস্তর নামতে শুরু করে। তবে এ দিন ফের বৃষ্টি শুরু হয় সিকিম পাহাড়-সহ তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিকিমের খনিতা এলাকায় ৬৯ মিলিমিটার, ডায়থাংযে ৭৮ মিলিমিটার, মংগনে ২৮ মিলিমিটার, কালিম্পংয়ে ৯৮ মিলিমিটার, গজলডোবায় ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে নদীর জলস্তর বাড়তে শুরু করে। যদিও দুপুরের পরে জল নেমে যায়। কিন্ত এ দিন জলস্তর যত নেমেছে স্রোতের দাপট ততটাই তীক্ষ্ণ হয়েছে।
কিছুটা চর এলাকায় তৈরি ময়নাগুড়ি থেকে ক্রান্তি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার পাকা সড়ক ভেঙে জলের ঢেউ আছড়ে পড়েছে বর্মণপাড়ায়। এ দিন সেচ দফতরের কর্মীরা ভাঙন প্রতিরোধের কাজে নামেন। এ দিকে বৃষ্টিতে সেচ দফতরের বাঁধের যে সমস্ত এলাকায় ধস নেমেছে সেগুলিও মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান গৌতম দত্ত বলেন, “বন্যা কোথাও হয়নি। নদী উপত্যকা এলাকা দিয়ে বইছে। সেখানে কিছু থাকলে তো নদী ছেড়ে কথা বলবে না। আমারা ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তার ভাঙন এবং বাধে যে সমস্ত ‘রেইন কাট’ হয়েছে সেগুলি মেরামতের কাজ শুরু করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।”
আবহাওয়াবিদ তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক সুবীর সরকার বলেন “এবার তিস্তায় বন্যা হয়নি। নদী তার নিজের এলাকায় একদিক থেকে অন্যদিকে যেতে যত বিপত্তি। নদী চর বলতে যা বোঝায় সেটা নদীর অংশ। সেখানে বসতি থাকার কথা নয়। নদী চরের দিকে ধেয়ে যাবেই। প্রশাসনকে ঠিক করতে হবে নদী চাই নাকি চর এলাকায় বসতি।” প্রশাসনের কর্তাদের কাছে ওই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “শুধু প্রশাসন কেন প্রত্যেককে সমস্যার গুরুত্ব বুঝে সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।”
ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান মধুসূদন কর্মকারও জানান, নদীবক্ষে বসতির সম্প্রসারণের জন্য সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে।
চর এলাকা যে ছাড়তে হবে সেটা নদীর তাণ্ডব দেখে বুঝতে পারছেন মতিয়ার রহমানের মতো চরের পুরনো বাসিন্দারা। ১৯৬৮ সালের বন্যার পর থেকে তিনি চরের বাসিন্দা। মতিয়ার সাহেব বলেন, “চরে আর থাকা যাবে না। নিরাপদ এলাকায় থাকব এখানে চাষ আবাদ করব।”
একই বক্তব্য বর্মনপাড়ার পুতুল বর্মন, জবা রায়দের। ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষ বসু জানান, পরিস্থিতি দেখে নির্মাণ কাজ নিয়েও অনেক বিষয় নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “সরকারি ভাবে ত্রাণ সাহায্যের কাজ চলছে। আমরা দলীয় ভাবেও ত্রাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।”