‘ভূতে’র ভয়ে দুপুরে খিল আঁটছে পাড়া

বাড়ির উঠোনে ধুপধাপ শব্দ। তার পরেই জানলা দিয়ে উড়ে আসছে এক দলা আগুন। পুড়িয়ে দিচ্ছে বিছানার লেপ-তোষক। ভর দুপুরে ভূতের ভয়ে তটস্থ নিউ জলপাইগুড়ির অম্বিকানগরের শান্তিপাড়া।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৪০
Share:

পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র দেখাচ্ছেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র।

বাড়ির উঠোনে ধুপধাপ শব্দ। তার পরেই জানলা দিয়ে উড়ে আসছে এক দলা আগুন। পুড়িয়ে দিচ্ছে বিছানার লেপ-তোষক। ভর দুপুরে ভূতের ভয়ে তটস্থ নিউ জলপাইগুড়ির অম্বিকানগরের শান্তিপাড়া।

Advertisement

বাসিন্দাদের দাবি, দুপুর বেলায় জানলা খোলা রাখলেই ঘরের বিছানা তোষকে আগুন লেগে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবারের বারবেলায় দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢুকে বিছানার তোষক জ্বলতে দেখে ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে দশম শ্রেণির এক ছাত্র। শুধু ওই ছাত্রই নয়, ভূতের আতঙ্কে ভুগছে নিউ জলপাইগুড়ির স্টেশন লাগোয়া গোটা পাড়া। ভূতের ভয়ে রাতে নয়, দুপুর বেলায় দরজা-জানলার খিল আঁটছে গোটা পাড়া।

পুলিশের অবশ্য দাবি, আগুনের পেছনে কোনও ভৌতিক কারণ নেই। কেউ ইচ্ছে করে খোলা জানলা দিয়ে দাহ্য পদার্থ ছুড়ে আগুন লাগাচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, কোনও ক্ষেত্রেই বড় আগুন লাগানোর চেষ্টা হয়নি। পুলিশের একাংশের অনুমান, কেউ ভয় দেখানোর জন্য এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে। একটি বোতলের মুখও উদ্ধার করেছে পুলিশ। অনুমান, সেই বোতলের মুখে কেরসিন বা পেট্রোল ছুড়ে আগুন লাগানো হয়েছে। কিন্তু কেন এ ভাবে আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে, তা এখনও বোঝা যায়নি। পুলিশ আশ্বস্ত করেছে, দ্রুতই বোঝা যাবে, কেন এমন ঘটনা ঘটছে। শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদারের কথায়, ‘‘কোনও ভৌতিক ঘটনা নেই। কেউ ইচ্ছে করে লেপ-তোষক পুড়িয়ে দিচ্ছে। আতঙ্কের কিছু নেই।’’

Advertisement

গত সোমবার থেকে এলাকার সাতটি বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি। একটি বাড়িতে পরপর তিন দিন একইভাবে আগুন লেগেছে। রাত পাহারার মতো শান্তিপাড়ায় শুরু হয়েছে দিন-পাহারা। বৃহস্পতিবারও দুপুরে বন্ধ ঘরের বিছানায় আগুন লেগে যাওয়ায় আতঙ্ক আরও চেপে বসেছে। কয়েকজন মহিলারা দাবি, দুপুর বেলায় বাড়ির পিছনেবা ফাঁকা উঠোনে ধুপধাপ শব্দও শোনা যাচ্ছে।

সোমবার থেকে আগুন লাগার সূত্রপাত। সে দিন দুপুর তিনটে নাগাদ সরস্বতী দাসের বাড়িতে আগুন লেগে যায়। টিনের চাল, বাড়ির দেওয়ালও টিনের। পোড়া গন্ধ পেয়ে ঘরে ঢুকে পড়শিরা দেখে বিছানায় আগুন জ্বলছে। ততক্ষণে পাশের বাড়ির ঘরের বিছানার তোষকেও আগুন লেগে গিয়েছে। কিছুটা দূরে আরও একটি বাড়ির তোষক পুড়ে যায় একইভাবে। সোমবারে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। এরপর মঙ্গলবার ললিতা সূত্রধরের বাড়ির লেপ ও বিছানাও পুড়েছে। সে দিনই দুপুরে দশম শ্রেণির ছাত্রী মৌসুমী সূত্রধর ঘরে ফিরে দেখেছে, বিছানার তোষকে আগুন জ্বলছে। পুড়ে গিয়েছে বিছানায় রাখা বই-খাতাও। মৌসুমী বলে, ‘‘ঘরে ঢুকে দেখি বিছানায় আগুন। ভেজানো জানালার পাল্লা খোলা। জানালা দিয়েই কেউ আগুন লাগিয়েছে।’’

এলাকার বাসিন্দা ত্রিদাম সূত্রধরের বন্ধ জানালাতেই আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। জানালার পাল্লায় আগুন লাগার কালো ছোপ। অম্বিকানগরের পঞ্চায়েত সদস্য মনোরঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘বাসিন্দারা ভয়ে রয়েছেন। অনেকে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।’’ তাপসী সূত্রধর উঠোনে কারও লাফালাফিরও শব্দও শুনেছেন বলে দাবি করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মঙ্গলবার দুপুরে উঠোনে ধুপধাপ শব্দ শুনে বেরিয়ে আসি। তারপরে শুনি পাশের বাড়িতে আগুন লেগে বিছানা পুড়ে গিয়েছে। ভয়ে এখনও শিউরে উঠছি।’’

বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল প্রতিটি বাড়ির সব জানালা বন্ধ। বাসিন্দারা দল বেঁধে গলিতে ঘুরছে। তারই মধ্যে ফের সরস্বতী দেবীর বাড়ির বন্ধ ঘরে আগুন লেগে যায়। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ তালা খুলে ঘরে ঢুকে সরস্বতীদেবীর ছেলে উদয় দেখে বিছানায় নীল শিখায় আগুন জ্বলছে। ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে উদয়। ওই ঘরে জানালা না থাকলেও, টিনের চালের নীচে বড় ফাঁক রয়েছে। এলাকার বাসিন্দা প্রশান্ত সরকার বলেন, ‘‘সকলে টহল দিচ্ছি, তার মধ্যে আগুন দিয়ে দিল। আগুন দেখা যাচ্ছে, কিন্তু কে আগুন লাগাল তা দেখা যাচ্ছে না। তাই আতঙ্কেই রয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন