গুলি ছুড়েই পুজো শুরু

রাত ১০টা বেজে ৩ মিনিট। তিথি অনুযায়ী অমাবস্যা শুরু। মঙ্গলবার মালদহের আড়াইডাঙা পঞ্চায়েতের গোবরজনা গ্রামের চৌধুরীবাড়িতে তখন সাজ সাজ রব। কেন না, অমাবস্যা শুরুর পরেই বাড়িতে গড়া কালী মূর্তিকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে।

Advertisement

জয়ন্ত সেন 

গোবরজনা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:১০
Share:

গোবরজনার কালী মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

রাত ১০টা বেজে ৩ মিনিট। তিথি অনুযায়ী অমাবস্যা শুরু। মঙ্গলবার মালদহের আড়াইডাঙা পঞ্চায়েতের গোবরজনা গ্রামের চৌধুরীবাড়িতে তখন সাজ সাজ রব। কেন না, অমাবস্যা শুরুর পরেই বাড়িতে গড়া কালী মূর্তিকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে। চৌধুরী পরিবারের পুরুষ সদস্যরা তো বটেই, গোবরজনা গ্রামেরও অন্তত জনা পঞ্চাশ যুবক তৈরি ‘মা’-কে ঘাড়ে করে বয়ে নিয়ে যেতে।

Advertisement

সওয়া দশটায় বরণপর্ব মিটতেই পারিবারিক বন্দুক থেকে শূন্যে গুলি ছুড়লেন চৌধুরী পরিবারের সদস্য স্বপন চৌধুরী। ঢাক, কাঁসর, সানাই বাজিয়ে সেই মূর্তিকে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গোবরজনা গ্রামেরই স্থায়ী মন্দিরে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হল। এক দিকে ঢাকের বাদ্যি, অার এক দিকে মন্দিরে হাজির কয়েকশো মহিলার উলুধ্বনি ও শাঁখের আওয়াজে পুজোর পরিবেশ ঘনিয়ে উঠল। মন্দিরের পাশ দিয়েই বয়ে চলা কালিন্দ্রী নদী থেকে ঘটে জল ভরে আনলেন চৌধুরী পরিবারের সদস্য বাবিন ঝাঁ। জল ভরা সেই ঘটও প্রতিষ্ঠিত হল মূর্তির সামনে। নিবেদন করা হল চাল-কলার নৈবেদ্য, থরে থরে সাজানো ফল, বাতাসা। রাত ১১টা বেজে ১০ মিনিটে শুরু হল সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন ও দেবী চৌধুরানির মন্ত্রদাতা সাধক ভবানী পাঠকের স্মৃতি বিজড়িত গোবরজনা কালীর পুজো। মন্ত্রোচ্চারণ করে চলেছেন পুরোহিত রোহিত কুমার। সঙ্গে রয়েছেন পূজারী জীবন ঠাকুরও।

মন্দিরের বাইরে তৈরি বিশাল প্যান্ডেলে তখন হাজির কয়েক হাজার ভক্ত। হিন্দুদের পাশাপাশি অসংখ্য মুসলমান পরিবারও পুজোয় হাজির। বলি দিতে আনা হয়েছে অন্তত হাজার পাঁচেক পাঁঠা। টানা প্রায় আড়াই ঘণ্টা পুজো চলল। তার পরে মন্দিরের সামনে রাখা তিনটে হাঁড়িকাঠে একের পর এক শুরু হল পাঁঠা বলি। আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত টানা বলি চলবে বলে জানালেন চৌধুরী পরিবারের সদস্য স্বপন চৌধুরী, তাপস চৌধুরী, চণ্ডী চৌধুরীরা। বলি শেষে, আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে প্রসাদ বিলি।

Advertisement

এ দিকে গোবরজনার জাগ্রত মা কালীর এই সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন পুজোকে ঘিরে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই মন্দিরের আশপাশে বসেছে মেলা। তেলেভাজা থেকে শুরু করে হরেক কিসিমের দোকানপাট বসেছে সেই মেলায়। ভিড়ও জমজমাট।

পুজো চলাকালীন সেখানে হাজির মালদহ জেলা পরিষদের সভাপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল। তিনি বললেন, ‘‘এই মায়ের পুজোর টানে প্রতি বছরই আসি। এ বার জেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছি। দায়িত্ব যাতে ঠিকঠাক পালন করতে পারি সে জন্য মায়ের আশীর্বাদ নিতে এসেছি।’’ এ দিন সকাল থেকেই চৌধুরী বাড়িতে হাজির এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য সামসুল হক। পুজোর সময়ও তিনি বসে মন্দিরের সামনে। তিনি বলেন, ‘‘এই সম্প্রীতির পুজোয় প্রতি বছরই হাজির থাকার চেষ্টা করি।’’

সুদূর ঝাড়খণ্ড থেকে পরিবারকে নিয়ে পুজো দিতে এসেছেন রমেন্দ্র চৌধুরী। তিনি বললেন, ‘‘এই জাগ্রত মায়ের কথা শুনেই পুজো দিতে এসেছি। পাঁঠা বলিও দেব।’’ এ দিন উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, পাশের রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ড এমনকি নেপাল থেকেও ভক্তরা এসেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন