কোচবিহারের কাটুম কাটুম যাবে দিল্লি

সে প্রায় দু’দশক আগের কথা। স্কুলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রদের পড়াচ্ছিলেন এক শিক্ষক। আচমকা চোখে পড়ে বেঞ্চের এককোণে গাছের ডাল নিয়ে ব্যস্ত এক পড়ুয়া। বকাঝকা করে সেই শুকনো ডালটি বাইরে ফেলে দেন তিনি। আপাত শান্ত সেই ছাত্রটিই আচমকাই বেজায় রেগে ওঠে। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েই ছেলেটিকে প্রশ্ন করেছিলেন, “ওটা দিয়ে কি হবে?” রাগে গজগজ করতে থাকা ছেলেটি বলেছিল, “অনেক কিছু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০২:৩৮
Share:

নিজের তৈরি কাটুম-কুটুম নিয়ে উৎপলবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

সে প্রায় দু’দশক আগের কথা। স্কুলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রদের পড়াচ্ছিলেন এক শিক্ষক। আচমকা চোখে পড়ে বেঞ্চের এককোণে গাছের ডাল নিয়ে ব্যস্ত এক পড়ুয়া। বকাঝকা করে সেই শুকনো ডালটি বাইরে ফেলে দেন তিনি। আপাত শান্ত সেই ছাত্রটিই আচমকাই বেজায় রেগে ওঠে। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েই ছেলেটিকে প্রশ্ন করেছিলেন, “ওটা দিয়ে কি হবে?” রাগে গজগজ করতে থাকা ছেলেটি বলেছিল, “অনেক কিছু। কিন্তু স্যার আপনি ওসব পারবেন না।” ছাত্রের ওই কথাটাই চিন্তাভাবনার মোড় ঘুরিয়ে দিল। শুরু হল নতুন অধ্যাবসায়। একমাসের ব্যবধানে ফেলে দেওয়া সেই শুকনো ডালেই ছেনি, বাটাল হাতে ওই শিক্ষক ফুটিয়ে তুললেন গাছের নীচে বিশ্রামরত দম্পতির মডেল।

Advertisement

সেই শুরু। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শিক্ষকতার ফাঁকে নতুন শিল্প তৈরির নেশায় মেতে ওঠেন কোচবিহার শ্রীশ্রী করুণাময়ী হাইস্কুলের শিক্ষক উৎপল চক্রবর্তী। তারই স্বীকৃতিতে এবার ডাক পেয়েছেন দিল্লির ললিত কলা অ্যাকাডেমি থেকে। ১৭-২৩ মে উৎপলবাবুর ‘কাটুম কুটুম’ শিল্পকর্মের একক প্রদর্শনী হবে সেখানে।

আপাতত দিল্লির ললিত কলা অ্যাকাডেমির ওই একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত কোচবিহারের আশ্রম রোড এলাকার বাসিন্দা উৎপলবাবু। বেশ কিছু বাছাই করা মডেল প্যাকেট বন্দি করার কাজও সম্পূর্ণ । নিজের পছন্দের কোন মডেল যাতে বাদ না যায় সে জন্য ঘরময় ছড়িয়ে থাকা শিল্পকর্মের তালিকা মেলাচ্ছেন। ললিত কলা অ্যাকাডেমিতে একক প্রদর্শনীর সুযোগ প্রাপ্তির প্রসঙ্গ উঠতেই উৎপল চক্রবর্তী বলেন, “ক্লাসের সেই দিনটার কথা এখনও মনে আছে। মন দিয়ে চেষ্টা করলে কোনও কিছু করা অসম্ভব নয় সেটা বোঝাতেই শিল্পে ঝুঁকেছিলাম। তবে সেদিনের ঘটনাটা না হলে হয়ত আমার জীবনের মোড় এভাবে ঘুরে যেত না। ললিত কলা অ্যাকাডেমির মত জায়গায় আমার শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর সুযোগ আসত না। তিনশোর বেশি মডেলও তৈরি হতনা। আগে উত্তরবঙ্গ থেকে কোন কাটুম-কুটুম শিল্পী সেখানে প্রদর্শনের ডাক পেয়েছেন শুনিনি।”

Advertisement

ছুটি পেলেই উত্তরের বনাঞ্চল থেকে চাবাগান, পাহাড়ী নদী থেকে ঝর্ণা মনের খেয়ালে ঘুরে বেড়ান উৎপলবাবু। পড়ে থাকা শুকনো ডাল, ভেসে আসা গাছের টুকরো, শেকড়বাকড়ে ফুটিয়ে তোলেন নানান ছবি। কখনও তৈরি হয় বাউল বেশী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উড়ান্ত পাখি, পশু, মানুষের নানা মূহূর্তের রকমারি জীবনের ছবি। প্রাচীন কালের দেবদেবী থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্যের অবয়ব ফুটিয়ে তোলেন কখনওসখনও।

১৯৯৯ সালে নিজের স্কুলের রজত জয়ন্তীতে প্রথমবার নানান শিল্পকর্মের প্রদর্শনী করেছিলেন তিনি। তারপর নানা জায়গা থেকে ডাক এসেছে। কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসেও ২০১৩ সালে তাঁর একক প্রদর্শনী প্রশংসা কুড়োয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন