হুঁশ ফেরেনি মৃত্যুতে

জঙ্গল থেকে ফসল খেতে ধান খেতে ঢুকে ভোরের আলো ফুটে যাওয়ায় বাগডোগরায় গঙ্গারাম চা বাগানে আটকে পড়েছিল ৪০টি হাতির পাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৫
Share:

বেপরোয়া: ক’দিন আগেই হাতির পায়ে পিষ্ট হয়েছেন এক জন। তার পরেও হুঁশ ফেরেনি মানুষের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

গরুমারায় চোখের সামনে হাতি পিষে দিয়েছিল তার কাছে যাওয়া এক বাসিন্দাকে। তাতেও হুঁশ ফিরছে কই? বুধবারও উত্তরবঙ্গে দেখা গেল বন্যপ্রাণীকে উত্ত্যক্ত করার চেনা ছবি।

Advertisement

জঙ্গল থেকে ফসল খেতে ধান খেতে ঢুকে ভোরের আলো ফুটে যাওয়ায় বাগডোগরায় গঙ্গারাম চা বাগানে আটকে পড়েছিল ৪০টি হাতির পাল। ছিল ৫টি শাবকও। বুধবার ঘুম থেকে উঠেই তা দেখে একদল বাসিন্দা দিনভর মোবাইলে ছবি তোলা, নিজস্বী তোলা, পটকা ফাটিয়ে গেলেন। কয়েকদিন আগেই গরুমারায় স্যালুট করতে যাওয়ায় বুনো হাতি শুঁড়ে তুলে আছড়ে পিষে দিয়েছিল সিদ্দিকুল্লা রহমানকে। তার পরেও এ দিন বাসিন্দারা বারবারই হাতির পালের একেবারে কাছে চলে গিয়েছেন।

বাসিন্দাদের আচরণে বিরক্ত হয়ে ৫০০ মিটারের মধ্যে ঘোরাফেরা করলেও এলাকা ছাড়েনি হাতিরা। খবর পেয়ে এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের বনকর্মীরা তো বটেই, ঘটনাস্থলে যান পুলিশকর্মীরাও।

Advertisement

বাসিন্দাদের সরানোর কাজ চলে দিনভর। যদিও কারও ক্ষতি করেনি ওই দলটির সদস্যরা। গাছের ডাল ভেঙে, লতাপাতা খেয়ে, ধুলো উড়িয়ে দিন কাটিয়ছে দলটি। প্রায় ১২ ঘণ্টা বাগানে থাকার পর সূর্য ডুবতেই হাতির পালকে জঙ্গলে ফেরানো শুরু করতে পেরেছেন বনকর্মীরা।

বন দফতর সূত্রের খবর, শীত পড়তেই অসমের দিক থেকে তিস্তার পার হয়ে দলদলে হাতি উত্তরবঙ্গে প্রতিবছর ঢোকে। কিছু দল ডুয়ার্সের জঙ্গলেও ঢুকে পড়ে। বাকিরা দলে ভাগ হয়ে দলকা, কলাবাড়ি ও টুকুরিয়াঝারের জঙ্গলে আসে। এখন ১৬০টির উপর ৪টি দলে হাতিগুলি রয়েছে।

প্রচুর শাবক এবং দাঁতালও আছে। দলকার জঙ্গলের হাতিগুলি কিরণচন্দ্র চা বাগানের দিক থেকে এশিয়ান হাইওয়ে পার করে কেষ্টপুর, পাহাড়গুমিয়া, গঙ্গারাম চা বাগান লাগোয়া খেতগুলিতে রাতে ঢোকে। এটা বরাবরই হাতির করিডর হিসাবে পরিচিত। এদিনের দলটি দলকার জঙ্গলের। ভোরের আলো ফুটলে আর বুনোগুলি জঙ্গল বা চা বাগানের ঝোপ থেকে বার হতে চায় না।

গত ২২ নভেম্বর উত্তরকন্যার প্রশাসনিক বৈঠকে বন দফতরে এই মরসুমে বিশেষ নজরদারির কথা বলে গিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

বাগডোগরার এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের রেঞ্জার পেম্বা শেরপা জানান, জমিতে ধান উঠতেই এলাকার জঙ্গলগুলিতে হাতির অন্তত ৪টি দল চলে এসেছে। রাতে এরা বার হয়ে ফসল খাচ্ছে। কোনও সময় বাড়ি ঘরের ক্ষতিও করে। এদিন খেতে বেশি সময় নিয়ে ফেলে দলটি। তাই ভোর ভোর জঙ্গলে ফিরতে পারেনি। চা বাগানে ঢুকে ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে ওদের তাড়িয়ে জঙ্গলে ঢোকানো শুরু করা হয়েছে। দিনের বেলায় তা করতে গেলে উল্টে সমস্যা হত।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নুনিয়া ধানের লোভে আশাপুর চা বাগান হয়ে নেপালেও ঢোকে। সেগুলি নকশালবাড়ি ও খড়িবাড়ির সীমান্ত এলাকাতেও ঘোরাফেরা করে। শীত শেষ হওয়ার মুখে ধান জমি থেকে উঠে গেলেই দলগুলি ফিরে যায়। আবার জুন-জুলাই মাস নাগাদ বিঘার পর বিঘা ভুট্টার লোভে একই রুটে এলাকায় হানা দেয়। বাড়ি ঘরও ভাঙে। নকশালবাড়ির বাসিন্দা তথা শাসক দলের শ্রমিক নেতা নির্জল দে জানান, মাঝেমাঝে বাড়ি ঘরের ক্ষতি করে দলগুলি।

রকমজোত, তারাবাড়ি, নেহালজোত, কেটুকাপুর, নেপানিয়া, উত্তমছাট, গিরামণি, ভুবনগুড়ির মত বহু গ্রাম, চা বাগিচার বস্তির বাড়িঘরের ক্ষতি করে। রোজও শ্রমিকেরা এবারও জানাচ্ছেন। আমরা বন দফতরে নজরদারি বাড়াতে বলেছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন