চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি এক আইনজীবীকে জেরার নামে থানায় বসিয়ে রাখার অভিযোগে ভক্তিনগর থানার আইসি ও পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে ন্যায়বিচার চেয়ে দ্বারস্থ হতে চলেছেন শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। রবিবার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক চন্দন দে এই দাবি করেন।
সোমবার শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জরুরি বৈঠক তলব করা হয়েছে। সেখানেই আর কোনও জায়গায় অভিযোগ জানানো হবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুরেশ মিত্রুকা। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই পুলিশ কমিশনার এদিনও কোনও ফোন ধরেননি। তবে পুলিশের হয়ে এডিসি পূর্ব মৃণাল মজুমদার এদিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘থানার আইসি আমায় জানিয়েছেন, অভিযুক্ত আইনজীবী পশুপতি শাহকে রাতে থানায় রাখা হয়নি। প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পরের দিন ফের আনা হয়েছিল থানায়। আইনজীবীদের অভিযোগ ঠিক নয়।’’ এদিন অভিযোগ অস্বীকার করেন ভক্তিনগর থানার আইসি অনুপম মজুমদারও। যদিও এর বেশি কিছু বলতে তিনি অস্বীকার করেন। এডিসির দাবিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বারের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘উনি ঠিক কথা বলছেন না। ওই আইনজীবীকে লকআপে রাখা হয়েছিল। তার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। প্রয়োজনে তা আমরা পেশ করতেও পারি।’’ এমনকী পুলিশ কমিশনারকে এ বিষয়ে ফোন করলে উনিও সহযোগিতা করেননি বলে দাবি তাঁর।
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই পশুপতিবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগও অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি ভুল নোটারি করেছি বলে যে অভিযোগ উঠছে, তার দায়িত্ব আমার নয়। এটা একটা হলফনামা মাত্র।’’ তাঁর দাবি, এ ভাবেই কারও হলফনামা নোটারি করে দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, এমনকী অনেক নেতা-মন্ত্রীদেরও সম্পত্তির হলফনামাও তিনিই করে দেন শুধু মুখের কথায়। যদিও বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পশুপতিবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বিষয়ে তাঁরা কোনও হস্তক্ষেপ করবেন না বলে জানানো হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে চন্দন দে বলেন, ‘‘ওঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে আইনি পথেই তার বিচার হোক। আমরা পুলিশের অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি মাত্র। এমনকী পুলিশের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র বেআইনিভাবে ওঁকে আটক করে রাখার বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই।’’ তাঁর আরও দাবি, একজন আইনজীবীর সঙ্গে যদি এমন ব্যবহার হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছ থেকে কী ব্যবহার পান এটা সহজেই অনুমেয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি জমি জালিয়াতি মামলায় এক ধৃতকে জেরা করে অভিযুক্ত আইনজীবী পশুপতিাববুকে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভক্তিনগর থানায় ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। তাঁকে সারা রাত লকআপে রাখার পরেও গ্রেফতারি নথিতে সই করানো হয়নি। এমনকী শনিবার তাঁকে আদালতেও পেশ করা উচিত ছিল নিয়ম মাফিক। তা-ও না করে ওই দিনও রাত পর্যন্ত তাঁকে লকআপে রাখা হয়। জানা গিয়েছে, কাউকে গ্রেফতার করলে ভবানী ভবনের কন্ট্রোল রুমে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাঁর নাম জানাতে হয়। এ ক্ষেত্রে তাও করা হয়নি। এত বড় মামলায় ২৪ ঘন্টার বেশি কাউকে থানায় রেখে ছাড়া যায় না, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আবার ছাড়া হলেও তা আদালতে জানাতে হবে। সেটাও করেনি আইসি বা ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার জেভিয়ের লেপচা। এই ত্রুটিগুলি নিয়েই আইনি পথে হাঁটতে চাইছেন আইনজীবীরা। শনিবার রাতে থানা ঘেরাও করেন শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। চাপে পড়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্যক্তিগত বন্ডে ওই আইনজীবীকে ছাড়তে বাধ্য হন পুলিশ কর্তারা।