মালদহে লিচু-গুজবের ধোঁয়াশা কাটানোর তদন্তে প্রতিনিধি দল

গত বছর লিচুর মরসুমে মালদহ জেলায় শিশু-মৃত্যুর কারণ নিয়ে আজও ধোঁয়াশা কাটেনি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে জেলায় এসেছেন ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের তিন জনের প্রতিনিধি দল। তবে তাঁদের পরীক্ষার আগেই রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী জানান, লিচু খাওয়ার কারণে শিশুরা মারা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৩১
Share:

গত বছর লিচুর মরসুমে মালদহ জেলায় শিশু-মৃত্যুর কারণ নিয়ে আজও ধোঁয়াশা কাটেনি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে জেলায় এসেছেন ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের তিন জনের প্রতিনিধি দল। তবে তাঁদের পরীক্ষার আগেই রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী জানান, লিচু খাওয়ার কারণে শিশুরা মারা যায়নি। তিনি বলেন, “আমাদের দফতর পরীক্ষা করে দেখেছে লিচুতে কোনও ভাইরাস নেই। তবে কাঁচা লিচু না খাওয়াই ভাল। এই জেলার লিচু রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যায়। সে সব এলাকা থেকে এমন খবর পাওয়া যায়নি। তবুও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মৃত্যুর কারণ সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিনিধিদের জেলায় নিয়ে আসা হয়েছে। কারণ আমরা চাই না ফের এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক।”

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “গত বারের লিচুর মরসুমে মৃত এবং আক্রান্ত শিশুদের রোগ নির্ণয় এখনও হয়নি। তাদের প্রত্যেকেই ওই সময়ে লিচু খেয়েছিল। ফলে লিচু যে নিরাপদ, তা বলা যায় না। আবার লিচু খেয়েই যে এমন হয়েছে, তাও বলা যাবে না।” তিনি জানান, ওই শিশুদের বেশির ভাগই খালি পেটে লিচু খেয়েছিল। ফলে তাদের আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে তাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পুনেতে পাঠানো হয়েছে। ওই আধিকারিক বলেন, “গত বছরের ঘটনা এড়াতে হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।” কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কর্তারা অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ। তাঁদের এক কর্তা বলেন, “যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবে।”

কেন্দ্রীয় প্রতনিধি দল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের মজফফরপুরেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে ব্যাপক পরিমাণে লিচু উত্‌পাদন হয়। সেখানেও এখনও শিশু-মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায়নি।

Advertisement

মজফফপুরের আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে মালদহের আক্রান্ত শিশুদের রোগের লক্ষণে কতটা মিল রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের প্রতিনিধিরা।

তাঁরা মৃত ও আক্রান্ত শিশুদের রোগের নথি খতিয়ে দেখে তার রিপোট কেন্দ্রে পাঠাবেন। তাঁরা বলেন, “এখনই রোগের কারণ বলা যাবে না। তদন্তের পরে বলা সম্ভব।”

তবে গত বছরের মতো পরিস্থিতি হলে মালদহ মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো কতটা রয়েছে, সে বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করে কেন্দ্রে জানানো হবে। মালদহ মেডিক্যালের সুপার তথা সহ অধ্যক্ষ মহম্মদ আব্দুর রশিদ বলেন, “ওঁরা রোগের কারণ খতিয়ে দেখছেন। তবে এখনই পরিষ্কার করে কিছু বলা সম্ভব নয়।” গত বছর শুধু মালদহ জেলার কালিয়াচক থেকেই খিঁচুনি দিয়ে জ্বরের লক্ষণ নিয়ে ৭৫ জন শিশু ভর্তি হয়েছিল। এক সপ্তাহে ৩২ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ফলে জেলা জুড়ে ব্যপক আতঙ্ক ছড়ায়। সেই সময়ে চিকিত্‌সকদের একাংশ লিচু ভাইরাসে আক্রান্ত অনুমান করে চিকিত্‌সা শুরু করে দিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে রোগের কারণ নির্ধারণ করতে নমুনা সংগ্রহ করে পুনেতে পাঠানো হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজের তরফ থেকে। তার রিপোর্ট এখনও আসেনি। তার আগেই রাজ্যের উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু লিচু নিরাপদ বলে প্রচার করায় বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন