রাতে বিকল বিকল্প লিফটও

প্রসূতি নিয়ে ঝুলে লিফট

প্রসূতি দীপালি রায় নিজেই বলেন, ‘‘ভিতরে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল আমার। স্বামীর হাত আঁকড়ে চিৎকার করে কাঁদছিলাম আমি।’’ 

Advertisement

অর্জুন ভট্টাচার্য 

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯ ০১:৫৭
Share:

ভোগান্তি: লিফট বিকল থাকায় স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোগীকে। ছবি: সন্দীপ পাল

বুধবার রাত তখন সাড়ে দশটা। জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের মাদার ও চাইল্ড হাবে অন্তঃসত্ত্বা দীপালি রায়কে ফোর্থ ফ্লোর বা পাঁচতলা থেকে লিফটে করে গ্রাউন্ড ফ্লোর বা একতলার অপারেশন থিয়েটার নিয়ে আসছিলেন হাসপাতালের কর্মীরা। ফার্স্ট ও সেকেন্ড ফ্লোরের মধ্যে লিফটটি আটকে যায়।

Advertisement

তার স্টিলের দরজা। বেশিক্ষণ ওই দরজা বন্ধ থাকলে ভিতরের লোকজনের শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হতে পারে। পরে প্রসূতি দীপালি রায় নিজেই বলেন, ‘‘ভিতরে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল আমার। স্বামীর হাত আঁকড়ে চিৎকার করে কাঁদছিলাম আমি।’’

দীপালির স্বামী মিঠুন রায় বলেন, ‘‘আমরা গ্রামের মানুষ। এমনিতেই লিফটের অভিজ্ঞতা নেই। তার উপরে হঠাৎ সেটি মাঝপথে আটকে যায়। খুব সমস্যা হচ্ছিল।’’ তাঁদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, প্রায় চল্লিশ মিনিট ওই লিফটে দোতলা আর তিনতলার মধ্যে আটকে ছিলেন তাঁরা। মিঠুন বলেন, ‘‘ভিতরে আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। সঙ্গে হাসপাতালের এক দাদা ছিলেন। তাঁর বুদ্ধিতেই শেষ পর্যন্ত প্রাণে বেঁচে গিয়েছি।’’

Advertisement

রোগিণীর সঙ্গে থাকা হাসপাতালের অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মী দেবাশিস দাস বলেন, ‘‘লিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ভেবেছিলাম হয়তো লোডশেডিং হয়েছে। পাঁচ-সাত মিনিট পরে মোবাইল ফোন থেকে ওয়ার্ডের দিদিদের এই অবস্থার কথা জানাই। খবর দেওয়া হয় ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরেও। লিফটের স্টিলের দরজাও খুলতে পারছি না। এ ভাবেই কেটে যায় প্রায় চল্লিশ মিনিট। পরে নিজের মোটরবাইকের চাবি লিফটের দুই দরজার মাঝে গুঁজে দিয়ে কিছুটা দরজা ফাঁক করি। এর পর গায়ের জোরেই দরজা খুলে ফেলি।’’

সূত্রের খবর, ওই সময়ে ফার্স্ট ফ্লোরের থেকে লিফট ফুট চারেক উপরে। বহুক্ষণ চেষ্টার পরে ওয়ার্ডের নার্সিং স্টাফ ও কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীরা মিলে ওই রোগিণীকে লিফট থেকে বের করে নিয়ে আসেন। পরে বিকল্প জরুরি লিফট ব্যবহার করে ওই প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।

অভিযোগ, প্রায়ই মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের এই লিফট বিকল হয়ে পড়ে। বিকল্প জরুরি লিফট ব্যবহার করতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। রাতে এই বিভাগে আসা রোগীদের বাড়ির লোকেরা জানান, জরুরি লিফট ব্যবহার করতে খুবই অসুবিধা হয়েছে। অপারেশন থিয়েটার লাগোয়া ওই লিফটের কাছে পৌঁছনোর গেট বন্ধ ছিল। লোহার বেড়া ডিঙিয়ে ওই লিফটে যেতে হয়েছে। অনেক প্রসূতিরই রাতে সিঁড়ি ভেঙেই চারতলা-পাঁচতলায় উঠতে হয়েছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিকল লিফট মেরামত করা হয়নি বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

হাসপাতাল সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, ‘‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের লিফট বিকল হয়ে পড়ার খবর পেয়েই দ্রুত জরুরি বিকল্প লিফট চালু করা হয়েছে। লিফট বিকল হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে বড় কোনও অঘটন ঘটে ন। দ্রুত লিফট মেরামতির কাজ শুরু করার চেষ্টা চলছে।’’ রাতে খবর পাওয়া যায়, সেই বিকল্প লিফটটিও বিকল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন