কম ফলনে দুর্যোগের কোপ, আশঙ্কা লিচু চাষে

‘অফ ইয়ার’-এর জন্য কম হয়েছে উৎপাদন। তার উপরে ঝড় ও বৃষ্টি। ফলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে মালদহ জেলার লিচু চাষ। লোকসানের আশঙ্কা করছেন জেলার লিচু চাষিরা। লিচু চাষিদের বক্তব্য, বিগত মরসুমে জেলায় ব্যাপক উৎপাদন হয়েছিল লিচুর। তবে লিচু নিয়ে রটনার পর সস্তা দরে তা বিক্রি করতে হয়।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০২:৩৫
Share:

ফলন কম হওয়ায় আকারে ছোট এবং কাঁচা লিচুই বিকোচ্ছে বাজারে। মালদহের কালিয়াচকে মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

‘অফ ইয়ার’-এর জন্য কম হয়েছে উৎপাদন। তার উপরে ঝড় ও বৃষ্টি। ফলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে মালদহ জেলার লিচু চাষ। লোকসানের আশঙ্কা করছেন জেলার লিচু চাষিরা।

Advertisement

লিচু চাষিদের বক্তব্য, বিগত মরসুমে জেলায় ব্যাপক উৎপাদন হয়েছিল লিচুর। তবে লিচু নিয়ে রটনার পর সস্তা দরে তা বিক্রি করতে হয়। ফলে প্রচুর টাকার ক্ষতি হয়েছিল। এ বার প্রথম থেকেই লিচু উৎপাদন কম হয়েছে। তার উপরে ঝড় ও বৃষ্টির হওয়ায় লিচু নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ বারও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে জানান তাঁরা।

উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে দাম চড়ার সম্ভাবনা দেখছেন জেলাবাসী। জেলা উদ্যান পালন দফতরের সহ অধিকর্তা রাহুল চক্রবতী বলেন, ‘‘অফ ইয়ারের জন্য লিচুর উৎপাদন কম হয়েছে। এ ছাড়া ঝড় বৃষ্টিতেও লিচুর কিছু ক্ষতি হয়েছে। এমন অবস্থায় ফের বৃষ্টি হলে লিচু চাষের পক্ষে ক্ষতি। তবে এ বার গাছে লিচু কম থাকায় এর গুণগত মান ভাল হবে। ফলে বাজারে দাম পাবেন চাষিরা।’’

Advertisement

উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলায় ১২০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়। জেলার মধ্যে ৭০ শতাংশ লিচু চাষ হয় কালিয়াচক ১ ব্লকে। ব্লকের কালিয়াচক ১, মোজমপুর, সুজাপুর, শেরশাহি, সিলামপুর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং আলিনগর, সুলতানগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় লিচু চাষ হয়। বাকি ৩০ শতাংশ লিচু চাষ হয় কালিয়াচক ৩ ব্লক, রতুয়া এবং ইংরেজবাজারের কিছু অংশে। আমের মতো লিচুও জীবনী শক্তির কারণে এক বছর ভাল উৎপাদন হয়, পরের বছর কম উৎপাদন হয়।

গত বছর জেলায় লিচু উৎপাদন হয়েছিল ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এ বার অফ ইয়ারের জন্য গাছে ৪০ শতাংশ মুকুল আসে। জেলায় এই মুহূর্তে চার হাজার মেট্রিক টন লিচু রয়েছে। গত এপ্রিল মাসে জেলায় দু’দফায় ঝড় বৃষ্টি হয়। এক বার মাসের শুরুর দিকে এবং এক বার শেষের দিকে। ঝড় বৃষ্টির ফলে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মেট্রিক টন লিচুর ক্ষতি হয়েছে। ফলে চাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়।

এই সময় লিচুর গায়ে রং ধরতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় বৃষ্টি হলে লিচু চাষে ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানান, উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, বৃষ্টি হলে লিচুতে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। সেই পোকাগুলি লিচুর বোঁটা কালো করে লিচুকে নষ্ট করে দেয়। সে জন্য চাষিদের আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে। ফল ছিদ্রকারী পোকা রুখতে কীটনাশক ছড়াতে হবে। তা হলে এই পোকার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

এ ছাড়া লিচুতে রং ধরতে শুরু করায় বাদুড়, কাকের উপদ্রব দেখা দেয়। তার জন্য চাষিদের মশারি দিয়ে ফল ঢেকে রাখতে হবে। এ ছাড়া অনেক সময় লিচু বাদামি রঙের হয়ে যায়। শুকনো দক্ষিণা বাতাসের জন্য এমন রোগ দেখা যায়। তার জন্য লিচু বাগানের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে আম গাছের মতো গাছ বুনতে হবে।

মালদহে দু’ধরনের লিচু চাষ হয়। একটি হল গুটি লিচু, অপরটি বম্বে লিচু। চলতি মাসের মধ্যেই বাজারে দেখা যাবে গুটি লিচু। বম্বে লিচুর জন্য জেলাবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে জুন মাস পর্যন্ত। লিচু উৎপাদন কম হওয়ায় হতাশ জেলার চাষিরা। সফিকুল মিয়াঁ, রফিক শেখরা বলেন, ‘‘লিচু রসাল ফল হওয়ায় গাছ থেকে পাড়ার দু’এক দিনের মধ্যে বিক্রি করতে হয়, না হলে তা পচে নষ্ট যায়। তাই ফলন বেশি হওয়ায় গত বার সস্তা দরে লিচু বিক্রি করতে হয়েছিল। এ বার লিচুর উৎপাদন কম হয়েছে। তার উপরে ঝড় বৃষ্টি। ফলে প্রচুর টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।’’ এমন অবস্থায় বৃষ্টি হলে সব শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা চাষিদের। লিচু উৎপাদন কম হওয়ায়, বাজারে এ বার চাষিরা ভাল দাম পাবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন