পদ ২৪৪, প্রার্থী ৭০০০

চড়া রোদে গরমে ঘেমে নেয়ে গর্ভবতী মহিলা থেকে শিশু কোলে চাকরি প্রার্থী গৃহবধূ সহ হাজার হাজার ছেলেমেয়ের ভিড়ে পুলিশ থানা চত্বর থেকে রাস্তা জনজোয়ারের চেহারা নেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৭ ০২:২৩
Share:

মরিয়া: বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিভিক ভলান্টিয়ার পদে নিয়োগের ফর্ম বিলি হয় ইসলামপুর মহকুমার থানা গুলিতে। আবেদনকারীদের ভিড়ে ইসলামপুর শহরে যানজট তৈরি হয়। ভিড় সামলাতে পুলিশকে লাঠি উঁচিয়ে ভয় দেখাতেও দেখা গিয়েছে। ছবি: অভিজিৎ পাল

ডোমের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন পিএইচডি করছেন এমন প্রার্থীও। এ বার সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরির জন্যও উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীরা আবেদন করেছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরে মাত্র ২৪৪টি আসনের জন্য আবেদন পড়েছে ৭ হাজার। শুধু তাই নয়, এই পদে আবেদনের জন্য মাত্র ১২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি।

Advertisement

সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন ধার্য করে জেলা পুলিশ। দাবানলের মতো খবর ছড়িয়ে এ দিন সকাল থেকে জেলার ৮টি থানায় বেকার যুবক যুবতীদের মধ্যে ফর্ম জমা দিতে ভিড়ে ভিড়াক্কার।

চড়া রোদে গরমে ঘেমে নেয়ে গর্ভবতী মহিলা থেকে শিশু কোলে চাকরি প্রার্থী গৃহবধূ সহ হাজার হাজার ছেলেমেয়ের ভিড়ে পুলিশ থানা চত্বর থেকে রাস্তা জনজোয়ারের চেহারা নেয়। ফর্ম জমা দিতে জানলার কাছে যেতে ভিড় ঠেলে থানার দেওয়ালে উঠে পড়েন অনেকে।

Advertisement

কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে জেলার নির্বাচনী আচরণ বিধির বিষয়টি জেনে টনক নড়ে প্রশাসনের। জেলায় সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন জেলাশাসক সঞ্জয় বসু। আগামী ১৩ অগস্ট রাজ্যের ৬টি পুরসভার সঙ্গে এ জেলার বুনিয়াদপুর পুরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন আচরণবিধিও লাগু হয়ে গিয়েছে। জেলাশাসক বলেন, নির্বাচন আচরণবিধির কারণে ফর্ম জমা নেওয়া বন্ধ করতে বলেছি।

কিন্তু কেন দেরি করে আবেদন দিতে বলা হল? জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বুধবার রাতে নির্দেশ পেয়েছি। সেই মতো আজই আবেদন চেয়েছি। আজই শেষ দিন জমা দেওয়ার। তবে রাপুরভোট বলে এখন ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে। ১৩ অগস্টে পরে আবার এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’

তাতে অবশ্য ফর্ম জমা নেওয়া বন্ধ করতে পারেনি থানা কর্তৃপক্ষ। বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেলেও অনেক থানায় প্রার্থীদের ভিড় ছিল অব্যাহত।

জেলার ৮টি থানা মিলে সিভিক ভলান্টিয়ারের মোট শূন্য পদের সংখ্যা মাত্র ২৪৪টি। থানা প্রতি কোথাও মাত্র ৩০টি কোথাও ৫০টির মতো পদের জন্য এ দিন সকাল থেকে চাকরীপ্রার্থীদের ঢল দেখে চমকে ওঠেন পুলিশ কর্তারা। যেমন বালুরঘাট থানার অধীন মোট ৫০ জনকে নেওয়া হবে। বিকেল পর্যন্ত এই থানায় অন্তত প্রায় ৭ হাজার ফর্ম জমা পড়ে গিয়েছে। তপন থানার অধীন সিভিক ভলান্টিয়ার নেওয়া হবে ৪৩ জন। কিন্তু সন্ধ্যার পরেও লাইন দিয়ে প্রার্থীরা ফর্ম জমা দিয়েছেন। প্রাথমিক খবরে জেলা জুড়ে প্রায় ৪০ হাজার ফর্ম জমা পড়েছে।

এ দিন বালুরঘাট থানার সামনে ফর্ম জমা দিতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এডুকেশনে মাস্টারডিগ্রি করা স্থানীয় যুবতী স্বপ্না প্রসাদ বলেন, ‘‘সংসারে অভাব। বিএড করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। সিভিকের চাকরি পেলেও উপকার হবে।’’ বিএ অনার্স পাশ ধীমান সরকারের বক্তব্য, ‘‘দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চাকরি নেই। বয়স বেড়ে যাচ্ছে। সিভিকের চাকরিটাও যদি মেলে, বেঁচে যাই।’’ চিঙ্গিশপুরের বাসিন্দা বিএ পাশ অন্তঃসত্ত্বা বধূ শেফালি বর্মন বলছেন, ‘‘সিভিকের মতো ছোট চাকরির আশায় লাইনে দাঁড়িয়েছি। দেখি কী হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন