ব্রিগেডমুখী ভিড়ে ‘দখল’ সিট, ক্ষোভ

বুকে ‘ব্যাজ’। মুখে মা-মাটি-মানুষ জিন্দাবাদ। অভিযোগ, বিনা টিকিটেই ওই যাত্রীরা ট্রেনে ওঠে যে যেখানে আসন দেখছেন বসে পড়ছেন। কেউ কেউ আবার নিচেই চাদর পেতে শুয়ে পড়ছেন। টিকিট পরীক্ষক এলেই একযোগে বলে উঠছেন, ‘আমরা ব্রিগেড যাচ্ছি।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:১৯
Share:

নিউ কোচবিহার স্টেশনে ভিড়। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

বুকে ‘ব্যাজ’। মুখে মা-মাটি-মানুষ জিন্দাবাদ। অভিযোগ, বিনা টিকিটেই ওই যাত্রীরা ট্রেনে ওঠে যে যেখানে আসন দেখছেন বসে পড়ছেন। কেউ কেউ আবার নিচেই চাদর পেতে শুয়ে পড়ছেন। টিকিট পরীক্ষক এলেই একযোগে বলে উঠছেন, ‘আমরা ব্রিগেড যাচ্ছি।’

Advertisement

গত দু’দিন ধরে কলকাতাগামী ট্রেনগুলিতে এমনই অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। টিকিট কেটে যারা যাত্রা করছেন তাঁদের অনেককেই রাতভর দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, সাধারণ কামরা তো বটেই, সংরক্ষিত কামরাতেও একই হাল। তা নিয়ে টিকিট কাটা যাত্রীরা কেউ প্রশ্ন তোলার সাহস পাচ্ছেন না। ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ। সেখানে উত্তরবঙ্গ থেকে হাজার হাজার লোক যাচ্ছেন। আলিপুরদুয়ার, নিউ কোচবিহার, ফালাকাটা, ধূপগুড়ি জলপাইগুড়ি রোড, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকেই ট্রেন ধরছেন তৃণমূল কর্মীরা।

যাত্রীদের অভিযোগ, প্রত্যেকটি স্টেশনের সামনেই তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস রয়েছে। সেখানে রাখা হয়েছে ঘাসফুল চিহ্ন আঁকা ব্যাজ। তৃণমূল কর্মীরা স্টেশনে গিয়ে টিকিটের পরিবর্তে ব্যাজ নিচ্ছেন। অনেকে তা জামার বুকপকেটের সামনে ঝুলিয়ে রাখছেন। তার পরে চলে যাচ্ছেন প্ল্যাটফর্মে। ওই যাত্রীরা মূলত তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, পদাতিক এক্সপ্রেস, সরাইঘাট এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলিতেই যাতায়াত করছেন বলে সাধারণ যাত্রীরা দাবি করেছেন। উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের সাধারণ কামরায় নিউ কোচবিহারের এক যাত্রী শুক্রবার কলকাতায় গিয়েছেন। তিনি বলেন, “সারা রাত দাঁড়িয়ে এসেছি। অথচ আমার পাশে অনেকেই বসে ছিলেন যাঁদের টিকিট ছিল না।”

Advertisement

তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য ওই অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “প্রচুর কর্মী-সমর্থক ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য যাচ্ছেন। তাতে ট্রেনে একটু ভিড় হবেই। তবে কেউই বিনা টিকিটে যাচ্ছেন না। প্রত্যেকে টিকিট কেটেই ট্রেনে চাপছেন।” দলেরই এক নেতা অবশ্য বলেন, “যে কোনও রাজনৈতিক দলের সভায় এমন ভাবেই মানুষ যায়। সবাই টিকিট কেটে উঠতে পারে না। এটা এক-দু’দিনের বিষয়। তার পর অবস্থা ঠিক হয়ে যাবে।”

যাত্রীদের একটি অংশের অবশ্য স্পষ্ট অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষ ও তৃণমূল নেতৃত্ব পুরোটাই জানেন। কিন্তু কেউই ওই বিষয়ে পদক্ষেপ করছেন না। উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের একটি সংরক্ষিত কামরার এক যাত্রী বলেন, “আমার আসনে অন্তত ৪ জন সারা রাত বসেছিলেন। কয়েকজন নিচে প্লাস্টিক পেতে শুয়ে পড়েন। তার মধ্যেই কোনও রকমে যেতে হয়েছে।”

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক প্রণবজ্যোতি শর্মা বলেন, “টিকিট পরীক্ষক রয়েছেন সব ট্রেনে। বিনা টিকিটে যাতে কেউ যাতায়াত না করতে পারেন সে জন্য কড়া নজর রাখা হয়। তার পরেও এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন