একজোট: লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তাঁদের নিয়েই বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আছেন উত্তরবঙ্গের প্রার্থীরাও। বুধবার কলকাতায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থী আর জেলা সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকে তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোষ্ঠীকোন্দল রুখতে কড়া বার্তা দিয়ে রাখলেন। বৈঠকেই দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাইরে মুখ খুললে ফল ভাল হবে না। দলের ঐক্যবদ্ধ রূপটিই তুলে ধরতে হবে।
দল সূত্রে খবর, বেশ কিছু জায়গায় এ বার প্রার্থী নিয়ে দলের কোনও কোনও অংশে অসন্তোষ রয়েছে। যেমন কোচবিহারে জয়ী সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে এ বার টিকিট দেওয়া হয়নি। আবার বালুরঘাটে জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রর আপত্তি সত্ত্বেও গত বারের জয়ী অর্পিতা ঘোষকে প্রার্থী করা হয়েছে। এই নিয়ে কোনও দ্বন্দ্ব যে মেনে নেওয়া হবে না, তা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন।
বৈঠকের পরে মমতাও সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দু’এক জনের প্রার্থী হওয়ার লোভ ছিল।’’ প্রার্থী হতে না পারলে কেউ দলত্যাগ করতে পারে কি না, সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘গেলে আমি বেঁচে যাই।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মমতা বিভিন্ন কেন্দ্রে নিজেই প্রচারে যাবেন বলে জানিয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলিপুরদুয়ারে পা রাখেননি। জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন কখনও চালসা থেকে কখনও উত্তরকন্যা থেকে। তবে বুধবার কালীঘাটে লোকসভা ভোটের প্রার্থী সহ শীর্ষ নেতৃত্বদের নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মাকে জানালেন, ভোট প্রচারে তিনি আলিপুরদুয়ারে আসবেন। কবে আসবেন তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে দল জানিয়েছে। কোচবিহারের প্রার্থী পরেশ অধিকারী এ দিন ব্যক্তিগত কারণে আটকে পড়ায় বৈঠকে যেতে পারেননি। তিনি আজ বৃহস্পতিবার কালীঘাটে যাচ্ছেন। আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তিরকে ও জলপাইগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী বিজয়চন্দ্র বর্মণ বৈঠকে ছিলেন।
তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশের ধারণা, গত পঞ্চায়েতে আলিপুরদুয়ারে বিশেষত চা বলয়ের উত্থানে সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন নেতৃত্ব। ভোটের ফল বেরোনোর পরে দেখা যায় বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের কাছে পৌঁছে যায় বিজেপি। দখল করে একটি পঞ্চায়েত সমিতি। জেলা পরিষদের একটি আসনও পায় বিজেপি। তৃণমূল বিরোধী ভোট একজোট হওয়ার সঙ্গে দলের ভোটেও ক্ষয় হয়েছে বলে শাসকদলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়। কুমারগ্রামের বিধায়ক জেমস কুজুরকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেন মমতা। দলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মাকে জেলা পরিষদের মেন্টরও করা হয়েছে। তবে পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে মমতা নিজে আর আলিপুরদুয়ার আসেননি।
একবার আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক সভা উত্তরকন্যা থেকে করেছেন। শেষ বার গত বছর পুজোর পরে টিয়াবনে জলপাইগুড়ির প্রশাসনিক সভার সঙ্গে আলিপুরদুয়ারকেও জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।
তৃণমূলের একাংশের দাবি, আলিপুরদুয়ারের সংগঠনে যে ‘ক্ষতি’ হয়েছে, তা রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলার থেকে প্রশাসনিক ভাবে সামলানোর পথ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেছে নিয়েছিলেন। আলিপুরদুয়ার থেকেই চা বাগানে প্রশাসনিক কর্মসূচি অর্থাৎ জেলাশাসক থেকে শুরু করে পুরো প্রশাসনকে চা বাগানে পাঠিয়ে শ্রমিকদের কথা শোনার কর্মসূচি শুরু করা হয়েছিল। সে সবের সুফল লোকসভা ভোটে কাজে লাগানো যাবে বলে মনে করছে নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, এ দিন রাজ্য সরকারি প্রকল্পের প্রচার বেশি করে করতে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মোহন শর্মা বলেন, “বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নিজে আমাকে জানিয়েছেন, তিনি ভোটের প্রচারে আলিপুরদুয়ারে আসবেন। কবে আসবেন তা জানাননি। পরবর্তীতে আলোচনা করে জনসভার দিন ঠিক করা হবে।”
সকলকে নিয়ে কাজ করার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা। সেই সঙ্গে বিজেপির ‘অপপ্রচারে’ কোনও ভাবেই ভয় না পেয়ে প্রচারের কাজে মন দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের জলপাইগুড়ির লোকসভার প্রার্থী বিজয় বর্মণ বলেন, “আমাদের সংগঠনই জিততে যথেষ্ট। বিজেপি তো এখনও প্রার্থী খুঁজে পায়নি। নেত্রীর নির্দেশ মতোই কাজ করব।’’