ইমতিয়াজের পাশে শিক্ষকেরা

বাধার দেওয়াল তাকে আটকাতে পারেনি। তা পেরিয়েই সফল হয়েছে ইমতিয়াজ। কিন্তু এখন সে এগোবে কী ভাবেই তা নিয়েই চিন্তিত পরিজনেরা। গড়ালবাড়ি হাইস্কুলের ছাত্র ইমতিয়াজ আলির বাবা আমিনার রহমান পেশায় ভ্যানচালক। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার গড়ালবাড়ি পঞ্চায়েতের শোভাগঞ্জ ইমতিয়াজদের বাড়ি। টিনের চাল আর দরমার বেড়া দেওয়া ঘর। আমিনার রহমানের চার ছেলের মধ্যে ইমতিয়াজ তৃতীয়। সে এ বার মাধ্যমিকে ৬৪১ নম্বর (শতকরা ৯১.৫৭ পার্সেন্ট) পেয়ে পাশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০৩:০৩
Share:

ইমতিয়াজ আলি। —নিজস্ব চিত্র।

বাধার দেওয়াল তাকে আটকাতে পারেনি। তা পেরিয়েই সফল হয়েছে ইমতিয়াজ। কিন্তু এখন সে এগোবে কী ভাবেই তা নিয়েই চিন্তিত পরিজনেরা।

Advertisement

গড়ালবাড়ি হাইস্কুলের ছাত্র ইমতিয়াজ আলির বাবা আমিনার রহমান পেশায় ভ্যানচালক। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার গড়ালবাড়ি পঞ্চায়েতের শোভাগঞ্জ ইমতিয়াজদের বাড়ি। টিনের চাল আর দরমার বেড়া দেওয়া ঘর। আমিনার রহমানের চার ছেলের মধ্যে ইমতিয়াজ তৃতীয়। সে এ বার মাধ্যমিকে ৬৪১ নম্বর (শতকরা ৯১.৫৭ পার্সেন্ট) পেয়ে পাশ। ইমতিয়াজ বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৭৬, অংকে ৯০, ভৌতবিজ্ঞানএ ৯৭, জীব বিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯১ এনং ভূগোলে ৯৮ নম্বর পেয়েছে। ইমতিয়াজের ইচ্ছে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু বাধা দারিদ্র্য। বাবা আমিনার রহমান বলেন, “কী করে পড়াবো? আমি ভ্যান চালাই। কোনওদিন আয় হয় কোনও দিন হয় না। অতি কষ্টে সংসার চালাই। এ রকম অবস্থায় ছেলেকে পড়াবো কী করে ভেবে পাচ্ছিনা।”

ইমতিয়াজদের পরিবারের এই অবস্থা দেখে এগিয়ে এসেছেন গড়ালবাড়ি হাইস্কুলের শিক্ষকরা। ইমতিয়াজের বাবা ব্যক্তিগতভাবে কোন শিক্ষক রাখতে পারেননি। স্কুলের শিক্ষকরা সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছেন। তারা ইমতিয়াজকে আলাদাভাবে পড়িয়েছেন। সবকরকম সহায়তা দিয়েছেন। ইমতিয়াজের মা জাহানারা বেগম বলেন, “ওর পড়াশোনার বিষয়ে আমরা কিছু টেরই পাইনি। মাস্টারমশাইরা বই কিনে দিয়েছেন, পড়িয়েছেন, সবকিছু করেছেন।” সামনের লড়াইতেও পাশে রয়েছেন শিক্ষকেরা। ইমতিয়াজ ইতিমধ্যে উচ্চ-মাধ্যমিকের পড়া শুরু করে দিয়েছে। আপাতত সে স্কুলের শিক্ষক গৌরগোপাল দাসের জলপাইগুড়ির রায়কতপাড়ার বাড়িতে থাকছে। ইমতিয়াজ যাতে জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল অথবা ফণীন্দ্রদেব, এই দুটি স্কুলের একটিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে পারে, গড়ালবাড়ি স্কুলের সেই শিক্ষকরা চেষ্টাই করছেন। গড়ালবাড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষ বলেন.“ইমতিয়াজের জলপাইগুড়িতে থাকার এবং বইপত্রের সমস্ত ব্যবস্থা আমরা করবো। জলপাইগুড়িতে থাকাকালীন সে যাতে সেখানকার শিক্ষকদের কাছে নিখরচায় ব্যক্তিগতভাবে পড়তে পারে সেই ব্যবস্থাও আমরা করবো। কিন্তু ভবিষ্যতে ডাক্তারি পড়ার জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে গেলে আরও বইপত্র এবং কোচিং দরকার। সেটাই এখন আমাদের কাছে সমস্যা হয়েছে।”

Advertisement

ইমতিয়াজের এই ফল দেখে খুশি শোভাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দারাও। আশ্বাস দিয়েছেন গড়ালবাড়ি পঞ্চায়েতের শোভাগঞ্জের পঞ্চায়েত সদস্য লিয়াকত আলিও। বলেন, “পড়াশোনার বিষয়ে ওর যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য আমরা সবরকম সাহায্য করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন