শরতের হিমেল বাতাস বলে যায়, মা আসছেন

তিস্তা-তোর্সা-মহানন্দার ঘাটের মহালয়ার ছবিটা কেমন। লিখছেন আকাশবাণীর অবসরপ্রাপ্ত ঘোষক স্বর্ণকমল চট্টোপাধ্যায়।আবছা আলোয় তিস্তা-তোর্সা-মহানন্দার স্নান ঘাটে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় তর্পণ যাগযজ্ঞ স্তব গান পাঠের আয়োজনে জমায়েত পুন্যার্থীরা। পথে পথে জনস্রোতও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৪
Share:

মহালয়া আসতেই খোঁজ পড়ে রেডিওর। জলপাইগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

আবছা আলোয় তিস্তা-তোর্সা-মহানন্দার স্নান ঘাটে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় তর্পণ যাগযজ্ঞ স্তব গান পাঠের আয়োজনে জমায়েত পুন্যার্থীরা। পথে পথে জনস্রোতও। বর্ষণ স্নাত ধরিত্রীর বুকে আলোর ছটায় হিমালয়ের মাথায় প্রথম সকালে সূর্যের আলো অমানিশা। আহা! এমন দৃশ্য সেই কবে মনের গভীরে গেঁথে গিয়েছে কে জানে! তাই মহালয়া এলেই উত্তরের তিন নদীর ধারের ভোরের ছবিটা চোখ বন্ধ করে দেখার চেষ্টা করি। কখনও সটান চলে যাই।

Advertisement

শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের মহালয়ার ছবিটা বড়ই মনোরম লাগে। পিতৃপক্ষের শেষ, দেবী পক্ষের শুরুর মুহূর্তে নদীতীরের ভিড়, কাশবন, সব মিলিয়ে ঘোর লাগে। একন অবশ্য ঋতুর বৈচিত্র্য বোঝা বড্ড মুশকিল। শরৎ এসে গিয়েছে। অথচ বর্ষা যাই যাই করেও যাওয়ার ফুরসৎ পাচ্ছে না। তাই মাঝেমধ্যেই ঝিম ঝিমিয়ে নামছে। কখনও জোরালো, কখনও টিপটিপ, ভিজিয়ে দিচ্ছে গাছপালা, ডুবে যাচ্ছে নদী-নালা, পথ-ঘাট, জনপদ। রোগ-ব্যাধির প্রকোপে মানুষজন দিশাহারা। এর মধ্যেই ‘‘মা আসছেন।

আমার হৃদয়ের অনেকটা জায়গা জুড়েই রয়েছে আকাশবাণী। মহালয়া আর আকাশবাণীর আত্মীয়তা টের পাওয়ার সময় তো এটাই। বৎসারান্তে মা দুর্গার আগমনবার্তা ঘোষিত হয়।.আকাশবাণীর চিরন্তন অঞ্জলি অর্ঘ্য ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ ঘরে ঘরে। মনটা যেন হু হু করে ওঠে। যখন শুনি, ‘‘বাজলো তোমার আলুর বেণু’। এ কোনদিন পুরানো হওয়ার নয়। যেমন পুরানো হয় না শিউলির ঘ্রাণ, কাশফুলের দোলা।

Advertisement

শরতের হালকা মেঘ আকাশে ঘোরাফেরা না করলেও চারদিকে এখন পুজো পুজো আমেজ। ঘরভোলা মেজাজে মনটা বাইরের টানে পাড়ি দিচ্ছে হারিয়ে যাওয়ার নেই মানাকে মুঠোয় ধরে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে।

সময় গড়িয়ে যায়। অনেক কিছুই স্মৃতি হয়ে যায়। কিন্তু, মহালয়া পুরানো হয় না। জেগে থাকি মহালয়ার জন্য। অলৌকিক আলোর ছটার ভোরে মহানন্দার ধারে উপচে পড়া ভিড়। তিস্তার পাশেও জমায়েত কতজন।

তাই আজও টানে মহালয়ার ভোর। যেখানে নদীর ধারে দাঁড়ানো সবাইকে শরতের হিমেল বাতাস ফিসফিস করে বলে যায়, মা আসছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement