টাকার অভাবে নোট বদলে দেওয়া বন্ধ করে দিল শিলিগুড়ির প্রধান ডাকঘর। এ দিন বুধবার থেকে শিলিগুড়ির সব উপ এবং শাখা ডাকঘরেও নোট বদল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গ্রাহকদের হাতে দু’হাজার টাকার বেশি দিচ্ছে না ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। ডাকঘরের দাবি, তাদের কাছে টাকার জোগান কমে যাওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত। যার জেরে দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেল শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের। বুধবারও শহরের সরকারি এবং বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির সামনে নোট বদল এবং জমা দেওয়ার লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। লাইন দিয়েও টাকা না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে অনেক বাসিন্দাকে। দিনভর শহরের সিংহভাগ এটিএম ছিল বন্ধ। সব মিলিযে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সাত দিনের মাথাতেও দুর্ভোগ কমার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে শিলিগুড়িতে।
সরকারি নির্দেশ মতো ব্যাঙ্কের সঙ্গে পোস্ট অফিসও বাতিল হওয়া পুরোনো নোট বদলে দিচ্ছিল। শিলিগুড়ি প্রধান এবং উপ়ডাকঘরগুলিতে গত কয়েক দিনে কয়েক হাজার বাসিন্দা লাইন দিয়ে নোট বদল করেছেন। যাতে ব্যাঙ্কগুলির উপরে কিছুটা হলেও চাপ কমেছি বলে দাবি। সেই সঙ্গে সুবিধে হয়েছিল গ্রাহকদেরও।
ডাকঘর সূত্রের খবর, যত দিন যাচ্ছে টাকার জোগান কমেই চলেছে। সে কারণে নোট বদল পরিষেবা চালানো সম্ভব নয়। শিলিগুড়ি প্রধান ডাকঘর প্রতিদিন টাকা পায় এসবিআই-এর কারেন্সি চেস্ট থেকে। সেই টাকা ভাগ করা হয় শহর এবং লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন উপ ডাকঘরে।
টাকা যায় সেনাবাহিনী এবং বিএসএফ ক্যাম্পাসে টাকা পোস্ট অফিসেও। অল্প টাকা পেলেও সব উপ এবং শাখা ডাকঘরে তাই ভাগ করে দিতে হয় কর্তৃপক্ষকে। নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকে যা প্রয়োজন তার এক তৃতীয়াংশ টাকা এতদিন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ পেয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে তাতেও টান পড়েছে। গত মঙ্গলবার এবং এ দিন বুধবার প্রয়োজনের সিকিভাগ বরাদ্দও মেলেনি বলে দাবি। সে কারণেই টাকা বদল বন্ধ রাখা ছাড়া অন্য কোনও উপায়ও নেই বলে দাবি।
শিলিগুড়ি প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার অনিরূদ্ধ কুণ্ডু বলেন, ‘‘নোট বদল বন্ধ রাখা হয়েছে। টাকার জোগানের কিছু সমস্যা থাকাতেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে গ্রাহকরা টাকা তোলা চালু রয়েছে।’’
টাকার জোগান এমনই থাকলে সে পরিষেবাও কতটা সুষ্ঠু ভাবে করা যাবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভোগান্তির ছবি দেখা গিয়েছে হিলকার্ট রোডের এসবিআইয়ের দুই শাখায়। লম্বা লাইন ফুটপাতে কয়েকপাক ঘুরেছে। সকাল ৯টার সময়ে লাইন দিয়ে ব্যাঙ্কের ভিতরে পৌঁছতে বেসরকারি সংস্থার কর্মী তন্ময় দত্তের সময় লেগেছে দুপুর সাড়ে বারোটা। ক্ষুব্ধ তন্ময়বাবু বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ থাকলেও, হাতে পেলাম মাত্র দু’হাজার টাকা। তার বেশি দেবে না বলছে। লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে একবেলা অফিস কামাই হল। এমনিতেই হাতে টাকা নেই, তায় আবার একবেলা কামাইয়ে বেতনে কোপ পড়বে।’’
পাকুড়তলা এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় এ দিন লাইন পড়েছিল সকাল সাতটা থেকে। লাইনে দাঁড়ানো গৃহবধূ মধুরিমা ঘোষ বলেন, ‘‘কখন ব্যাঙ্ক থেকে ফিরতে পারব জানি না। বাড়ি ফিরলে তবে রান্না বসবে।’’ টাকার জোগান না বাড়লে পোস্ট অফিসের পরে ব্যাঙ্কেও টাকা বদল-তোলার ওপর কোপ পড়বে না তো, সেই আশঙ্কাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শিলিগুড়িতে।