গঙ্গাগ্রাসে বোধনের আগেই বিসর্জন

মালদহের কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারদেওনাপুর-শোভাপুর পঞ্চায়েতের এই অনুপনগরে প্রায় চারশো পরিবারের বাস। স্পোর্টস ক্লাবের উদ্যোগে সমস্ত গ্রামবাসীরা মিলে ক্লাবের মাঠেই গত দশ বছর ধরে দুর্গাপুজো করতেন ঘটা করেই। এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা পঞ্চমী থেকেই মেতে উঠত এই পুজোকে ঘিরে।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

এ বারও কাশ ফুটেছে। এ বারও আকাশ এখন ঘন নীল। কিন্তু এ বার আর পুজো হবে না।

Advertisement

যে মাঠে পুজো হত, সেই মাঠই যে গঙ্গাগর্ভে। যাঁরা পুজো করতেন, তাঁদের অনেকের বাড়িও কেড়ে নিয়েছে গঙ্গা। অনেকে এলাকা ছেড়েই চলে গিয়েছেন। তাই, পুজোর আগেই মালদহের অনুপনগর গ্রামে বাজছে বিসর্জনের সুর।

মালদহের কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারদেওনাপুর-শোভাপুর পঞ্চায়েতের এই অনুপনগরে প্রায় চারশো পরিবারের বাস। স্পোর্টস ক্লাবের উদ্যোগে সমস্ত গ্রামবাসীরা মিলে ক্লাবের মাঠেই গত দশ বছর ধরে দুর্গাপুজো করতেন ঘটা করেই। এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা পঞ্চমী থেকেই মেতে উঠত এই পুজোকে ঘিরে। দশমীতে বসত মেলা। এ বার তাঁদের পুজো দেখতে যেতে হবে পাশের গ্রাম পারলালপুরে।

Advertisement

গত বছর থেকেই অনুপনগরে গঙ্গা এগিয়ে আসে। সে বছর অন্তত তিনশো পরিবারের ঘরবাড়ি গঙ্গা গিলে নেয়। অনেকে ভাঙনের আতঙ্কে ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে চলে যান অন্য গ্রামে। এবারও বর্ষার শুরুতে গঙ্গা ফের থাবা বসায় এই অনুপনগর গ্রামে। প্রায় পঞ্চাশটি পরিবারের ভিটে সহ ঘরবাড়ি গঙ্গা ভাঙনে বিলীন হয়। কেউ চলে যান ভিন জেলায়, কেউ পারলালপুরে। বাকি পরিবারগুলিও আতঙ্কে নিজেরাই ঘরবাড়ি ভেঙে নেয়। তাঁরাও অন্য গ্রামে চলে যায়। ফলে গোটা অনুপনগর গ্রামই এখন কার্যত জনশূন্য। দু-একটি পরিবার ত্রিপলের তাঁবু টাঙিয়ে কোনওরকমে এলাকায় রয়েছেন।

অনুপনগর স্পোর্টস ক্লাবের ভবন ও মাঠকেও এবার গঙ্গা গ্রাস করে। ভিটেমাটি হারিয়ে ক্লাবের সভাপতি নারায়ণ মজুমদার সপরিবারে নদিয়ায় চলে গিয়েছেন ও ক্লাব সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বিশ্বাস মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানে ভাড়া বাড়িতে থাকছেন। ক্লাবের সদস্য গোপাল বিশ্বাস, সুশান্ত বিশ্বাস, স্বপন মণ্ডল সহ সকলেই কেউ নিজেরা বাড়ি ভেঙে বা কারও বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ায় পারলালপুরে আশ্রয় নিয়ে আছেন। গোপাল বলেন, ‘‘১০ বছর ধরে আমরা পুজো করছিলাম। গত বছর প্রায় তিনশো বাড়ি গঙ্গায় বিসর্জন হয়, তবুও পুজো করেছিলাম। কিন্তু এবার পুজো করার মতো পরিস্থিতিই নেই।’’

তবু এ বারেও কাশ ফুটেছে। এ বারেও আকাশ নীল। কিন্তু ঘর ফাঁকা। চাঁদা তুলবে কে, আর দেবেই বা কে? গোপাল বলেন, ‘‘বাধ্য হয়েই পুজো বন্ধ করতে হল। পরিস্থিতি বদলালে আগামী বছর পুজো হবে। না হলে বন্ধই হয়ে থাকবে পুজো।’’

তাই এ বার পুজোর সময় পারলালপুরের দিকে তাকিয়ে থাকবে অনুপনগর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement