শহরের মাল্লাগুড়ি থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে পাহাড়ের এক যুবককে গ্রেফতার করল শিলিগুড়ি পুলিশ। শনিবার দার্জিলিং জেলার পাহাড়ের সুখিয়াপোখরি এলাকা থেকে দার্জিলিং জেলা পুলিশ এবং শিলিগুড়ি পুলিশের একটি দল তাকে ধরেছে। ওই দিনই আদালতে পেশ করে ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে ধৃতকে। এই নিয়ে বিস্ফোরক উদ্ধার মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশ আরও কয়েকজনের খোঁজ করছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম রেডার ভুটিয়া। সুখিয়াপোখরি এলাকায় তার বাড়ি। পেশায় মাংসের ব্যবসায়ী। আগে যাদের ধরা হয়েছে, তাদের জেরা করে রেডারের নাম উঠে এসেছে। নেপাল থেকে গরুর ব্যবসায়ে রেডার জড়িত বলেও পুলিশ জেনেছে। গত অক্টোবর মাসের প্রথম নাগাদ টাকার বিনিময়ে রিডার নকশালবাড়ির দিক থেকে মিরিক লাগোয়া ওকাই চা বাগান এলাকায় একটি বড় বাক্স ডিটোনেটর এবং জিলেটিন স্টিক নিয়ে গিয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। সেখান থেকে পশুপতি এলাকায় অন্য একজন বাক্সটি নিয়ে যায়। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) ইন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরার পর নানা তথ্য বিভিন্ন সময়ে উঠে আসছে। চক্রের লোকজন উত্তরবঙ্গ পাহাড়, সমতল ছাড়াও নেপাল, উত্তর পূর্বাঞ্চলে দলটির লোকজন ছড়িয়ে রয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে। তদন্ত চলছে।’’
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধাননগরের মাল্লাগুড়ির একটি ভাড়া বাড়ি থেকে নেপালের তিন নাগরিক, দাওয়া শেরিং ভোটে, তার স্ত্রী পূজা সুব্বা এবং সঙ্গী কৃষ্ণপ্রসাদ অধিকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের ভাড়া বাড়ির ঘর থেকে উদ্ধার হয় ৬০৯ জিলেটিন স্টিক, ২০০ ডিটোনেটর এবং ৬৩০ মিটার কর্ডেক্স তার। তদন্তে নেমে পুলিশ কয়েক দিন পর ওই বাড়িরই একটি আসবাবপত্রের মধ্যে লুকিয়ে রাখা আরও ১৩০০টি ডিটোনেটর উদ্ধার করে।
প্রথমে দাওয়া দাবি করেন, মেঘালয়ের কয়লা খনিতে কাজ করার সুবাদে পাহাড়ি এলাকায় পাথর ভেঙে বাড়ি করা বা মাছ ধরার কাজে বিক্রির জন্য তিনি চোরাপথে বিস্ফোরকগুলি এনেছিলেন। ফের তদন্তে নেপালের আরেক বাসিন্দা ফুফু-র নাম উঠে আসে। দাওয়া নতুন করে দাবি করে, ফুফু-র হাতে মাল তোলার জন্যই তা মজুত করেছিলেন। ৩টি ব্যাগের জন্য তাঁরা তিন লক্ষ টাকা পেতেন। এর মধ্যে ১৮ নভেম্বর বাগডোগরা এলাকা থেকে গ্রেফতার হয় ফুরচুং ভুটিয়া। দার্জিলিং জেলার মিরিকে ধৃতের মূল বাড়ি রয়েছে। তবে নেপালের বিত্তামোড় এলাকাতেই বেশি থাকতেন। পেশায় গাছগাছড়া, পুরানো সামগ্রীর ব্যবসায়ী ফুরচুং কয়েক দফায় মিরিক ও শিলিগুড়ি ফুফুর সঙ্গে এসেছিল। ধৃতেরা তার পরিচিত।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানাচ্ছেন, তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই চক্রের জাল বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এখন ফুফু-সহ আরও কয়েকজনের খোঁজ চলছে। সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক কোথায় ঠিক যাচ্ছিল, সেই জায়গাতেই পৌঁছানোর চেষ্টা হচ্ছে।