মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বাঁধ তৈরি করতে যত টাকা লাগবে বলে হিসেব করা হয়েছে তার থেকেও প্রায় ৩০ শতাংশ কমে কাজ হবে তো?
প্রশ্নকর্তা খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে বসা মুখ্যসচিব মলয় দে বলছেন, ‘‘৩০ শতাংশ কমে কাজের বরাত দিলেন কী করে? হয় আপনাদের হিসেবে ভুল না হলে অন্য কোথাও সমস্যা হয়েছে।’’ উত্তরকন্যায় তিন জেলার প্রশাসনিক বৈঠকের বাতানুকুল ঘরেও তখন ঘেমেনেয়ে দশা জলপাইগুড়ি জেলা তথা উত্তরবঙ্গের সেচকর্তাদের।
প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মালবাজারের চাপাডাঙায় তিস্তা নদীর প্রায় দু’কিলোমিটার বাঁধের কাজের বরাত দেওয়া নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভরা সভায় ঘোষণা করলেন, ‘‘যে দোষী প্রমাণিত হবে সে শাস্তি পাবেই।’’
ঘটনার সূত্রপাত ঠিক এক সপ্তাহ আগে। চাপাডাঙায় তিস্তাবাঁধের শিলান্যাস অনুষ্ঠানের দিনই কাজের বরাত নিয়ে হইচই করেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কোনও কাজের বরাত দেওয়ার আগে দরপত্র তথা টেন্ডার আহ্বান করতে হয়। প্রকল্পের একটি আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়। তার ভিত্তিতে বিভিন্ন এজেন্সি দরপত্র জমা দেয়। যার দর সবচেয়ে কম থাকে তাকেই কাজের বরাত দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে এজেন্সিগুলি পরস্পরের থেকে দর কমাতে অনেক সময়ে ব্যপক ছাড় দেয়।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনও কাজের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশের বেশি কমে দর দিলে সেই এজেন্সিকে প্রথমেই কাজের বরাত দেওয়া হয় না। ডেকে পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয় এত কম দরে এজেন্সি কি ভাবে কাজ করবে। চাপাডাঙার বাঁধের কাজের ক্ষেত্রে সে সব কিছুই করা হয়নি বলে অভিযোগ। ২৯ শতাংশ কমে কাজ করা হবে বলে দর দিয়ে কাজ পায় একটি এজেন্সি। ঘটনাচক্রে এজেন্সির মালিক ফুলবাড়ি-ডাবগ্রাম কেন্দ্রের তৃণমূলেরই ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক।
শিলান্যাস অনুষ্ঠানের দিনই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবিবাবু অসন্তোষ প্রকাশ করে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মঞ্চ থেকে রবিবাবু বলেছিলেন, ‘‘এত কম টাকায় কাজ করবে কি করে? আমিও দেখতে আসব।’’ রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজী বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই রবিবাবু প্রশ্ন তোলেন। সে ঘটনার পরে সেচমন্ত্রী থেকে শুরু করে আধিকারিকরা সকলেই ‘‘ই-টেন্ডারে’র যুক্তি দিয়ে রবিবাবুর অভিযোগ খারিজ করে দেন।
কেন ক্ষুব্ধ হলেন মুখ্যমন্ত্রী?
সরকারি ব্যয়ের থেকে এত কম দরে কাজ করলে হয় কাজের মান ভাল হবে না নয়ত ভবিষ্যতে নানা অছিলায় বরাদ্দ বাড়ানোর আবেদন করা হয়। দুই প্রক্রিয়াতেই অনিয়ম বাসা বাঁধে বলে অভিযোগ। তাই অভিযোগ কানে যেতেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কাজ পাওয়া ঠিকাদার এজেন্সির কর্ণধার দেবাশিসবাবুর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘ই-টেন্ডারে কাজ পেয়েছি। বাকি যা বলার তা দফতর বলতে পারবে, আমার কিছু বলার নেই।’’