এলেন না মুখ্যমন্ত্রী, ক্ষোভ আমবাড়িতে

উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা। রবিবারের দুপুরে ঘরের দাওয়ায় বসে রয়েছেন তৃণমূলের নেত্রী-সমর্থকেরা। প্রতিবেশীদের ভিড় জমতে শুরু করেছিল দুপুরের আগে থেকেই। প্রশাসন থেকেই উঠোনে আলো লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকালে প্রশাসনের কর্তারা জানিয়ে গিয়েছেন, দুপুর ২টো নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসবেন।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৪
Share:

বাড়ির সামনে বসে অপেক্ষাই সার। এলেন না মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সন্দীপ পাল।

উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা। রবিবারের দুপুরে ঘরের দাওয়ায় বসে রয়েছেন তৃণমূলের নেত্রী-সমর্থকেরা। প্রতিবেশীদের ভিড় জমতে শুরু করেছিল দুপুরের আগে থেকেই। প্রশাসন থেকেই উঠোনে আলো লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকালে প্রশাসনের কর্তারা জানিয়ে গিয়েছেন, দুপুর ২টো নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসবেন। নতুন লাগানো ‘পিএল’ আলোর নীচে বারান্দায় পাশাপাশি বসানো হয়েছে সাদা শাড়ি পড়া প্রমীলা রায় এবং তাঁর ছেলে সুদীপকে। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া সুদীপের গায়েও সাদা থান কাপড়।

Advertisement

কথা ছিল শনিবার ভূমিকম্পের সময়ে মাথায় ইঁট পড়ে মৃত মংলু রায়ের বাড়িতে এসে মুখ্যমন্ত্রী পরিবার পরিজনদের সঙ্গে কথা বলবেন, ক্ষতিপূরণ দেবেন। তার পর থেকেই প্রশাসনিক তোড়জোড় শুরু হয় শিলিগুড়ি লাগোয়া আমবাড়ির ডাঙাপাড়ায়। গোটা এলাকায় ভিড় জমে যায়। ভিড় সামাল দিতে গ্রামের রাস্তার দু’পাশে দড়িও বেঁধে ফেলা হয়। টানা তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষার পর লোকমুখেই পরিবারের সদস্যরা জানতে পারলেন মুখ্যমন্ত্রী আসছেন না। নেতা-কর্মী থেকে পুলিশ কর্মীরা সকলেই ফিরে গেলেন একে একে। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে আমবাড়িতে। মুখ্যমন্ত্রী যদি নাই আসবেন, তবে কেন আগে থেকে সরকারি ভাবে আসার খবর জানানো হল, সে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতের পরিজনদের একাংশ। সন্ধেয় অবশ্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব মৃতের বাড়িতে গিয়ে প্রশাসনের তরফে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

নিজের বাড়ির পাশেই একটি দোতলা বাড়ি তৈরির কাজ করছিলেন রাজমিস্ত্রী মংলুবাবু। শনিবার দুপুরে ভূমিকম্পের সময়ে সেই বাড়ি থেকে লাফিয়ে উঠোনে নেমেও পড়েন, সে সময়েই উপর থেকে একটি ইঁট খসে মাথায় পড়ে মংলুবাবুর মৃত্যু হয় বলে পরিজনেরা জানিয়েছেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রবিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী আসবেন এ কথা রাতেই তাঁদের জানানো হয়েছিল। রবিবার সকালে সরকারি আধিকারিকেরা বাড়িতে এসে দুপুর ২টোয় মুখ্যমন্ত্রী আসবেন বলে জানিয়ে দেন। সকাল থেকেই বাড়িতে ছিলেন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায়। সরকারি আধিকারিকদের নির্দেশ মতো এ দিন দুপুর ২টোর আগেই মংলুবাবুর স্ত্রী প্রমীলা, ছেলে সুদীপ-সহ পরিবারের সদস্যদের বাড়ির বারান্দায় এসে বসানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীর বসার জন্য চেয়ারও পাতা হয় সামনে। মুখ্যমন্ত্রীর আসার খবর চাউর হওয়ায় তত ক্ষণে বাড়ির উঠোনে গাদাগাদি ভিড়। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দফায় দফায় ক্যামেরা, ‘বুমে’র সামনে সাক্ষাৎকার দিতে হয়েছে প্রমিলাদেবী এবং সুদীপকে। প্রমীলাদেবী বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আসছেন, এতেই আমরা কৃতজ্ঞ। টাকা-পয়সার প্রয়োজন নেই। ছেলেটার পড়াশোনা শেষ করা আর চাকরির যদি সাহায্য হয়, সেটাই চাইব।’’

Advertisement

যদিও, সেই চাওয়া অধরাই থেকে গেল। বিকেল ৫টা নাগাদ হঠাৎই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ক্যামেরা গোটোতে শুরু করেন, উঠোন থেকে সরে যান সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মীরা। লোকমুখেই প্রমীলাদেবী-সুদীপরা জানতে পারেন, মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ি থেকে মিরিকে চলে গিয়েছেন। ফিরে যান তৃণমূলের তাবড় নেতারা। অশৌচ চলতে থাকায়, দুপুরে ফলাহারের কথা ছিল পরিজনদের। বাড়িতে ভিড়ের চাপে সে সবও এ দিন হয়নি। মংলুবাবুর মেয়ে মলিনার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এলে খুশি হতাম। তবে সারা দিন খাওয়াদাওয়া না করে সকলে অপেক্ষায় থাকলাম। দিনভর সরকারি কর্তা থেকে শুরু করে বাড়িতে আসা নানা জনের নানা অনুরোধ-আর্জি শুনতে হল। কিন্তু আমাদের আর্জি জানানোর সুযোগ পেলাম না।’’

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য শিলিগুড়ি হাসপাতাল থেকেই মিরিকে চলে যান। হাসপাতালে দাঁড়িয়েই তিনি জানিয়ে দেন আমবাড়িতে তিনি যাচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নকশালবাড়িতে গিয়েছিলাম। শুনেছি, আমবাড়িতে মৃতের সৎকার হয়ে গিয়েছে। তাই আমি এখন আর যাচ্ছি না। গৌতম দেবকে (উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী) বলেছি, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিতে।’’ এ দিন মংলুবাবুর বাড়িতে এসেছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী থেকে শুরু করে আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোহন শর্মা, জলপাইগুড়ি পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহন বসু-সহ তাবড় তৃণমূল নেতারা। মুখ্যমন্ত্রীর না আসা নিয়ে সৌরভবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মিরিকে গিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতেই তিনি উত্তরবঙ্গে এসেছেন। প্রশাসনিক বৈঠকে সব সিদ্ধান্ত হবে।’’ এলাকার বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর মিরিক থেকে ফিরতে রাত হয়ে যাবে। সে কারণে দুপুরে আসতে পারেননি। তবে সকলেই ক্ষতিপূরণ পাবেন।’’

ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মংলুবাবুর ভাই রবিবাবুও। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যখন আসবেন না, তখন আগে থেকে বলা হল কেন।’’ এক পরিজনের দাবি, অশৌচের নানা নিয়ম পালন করতে হচ্ছে। শোকের পরিবেশ বাড়িতে। এই সময়ে বাড়ির ভিতরে বাইরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ‘বহিরাগত’দের দাপাদাপিতে না হল নিয়ম পালন, পাওয়া গেল না মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন