রাস্তায় পড়ে মৃত্যু, সাহায্যে এল না কেউ

অমানবিকতার নজির এ বার ইংরেজবাজার শহরে। আচমকা অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন এক শিক্ষক। পথচলতি বা স্থানীয় কেউ এগিয়ে এলেন না তাঁকে সাহায্যের জন্য। কিছু ক্ষণের মধ্যে সেখানেই বিনা চিকিৎসায় মারা যান তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২০
Share:

অসহায়: এ ভাবে পড়ে থেকেই মারা যান ওই শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র

অমানবিকতার নজির এ বার ইংরেজবাজার শহরে। আচমকা অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন এক শিক্ষক। পথচলতি বা স্থানীয় কেউ এগিয়ে এলেন না তাঁকে সাহায্যের জন্য। কিছু ক্ষণের মধ্যে সেখানেই বিনা চিকিৎসায় মারা যান তিনি। এমনকী, এর পরেও রাস্তার ধারে এক ঘণ্টা পড়ে রইল তাঁর দেহ। অথচ কেউ হাসপাতাল বা পুলিশকে খবর দেওয়ারও প্রয়োজন অনুভব করেননি। বৃহস্পতিবার সকালের এই ঘটনায় হতবাক শহরের বিশিষ্ট মানুষজন।

Advertisement

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে খবর, মহম্মদ সামিউল্লা (৫২) কালিয়াচকের বামনগ্রাম মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে (এমএসকে) পড়াতেন। স্ত্রী-পুত্র নিয়ে তিনি কালিয়াচকের কালিকাপুর স্কুল পাড়ায় থাকতেন। বেশ কিছু দিন ধরে কিডনির অসুখে তিনি ভুগছিলেন। সপ্তাহে দু’দিন ইংরেজবাজারের একটি নার্সিংহোমে ডায়ালিসিস করাতে আসতেন। এ দিনও সকালে সামিউল্লা বাসে এসে শহরের হ্যান্টাকালী মোড়ে নামেন। তার পর একটি রিকশায় নার্সিংহোমের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গৌড় রোডে আচমকা রিকশায় বসেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েক জন জানান, রিকশাতেই তিনি রীতিমতো কাঁপছিলেন। রিকশাচালক কোনও রকমে তাঁকে রাস্তার পাশে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান। অভিযোগ, সব দেখেও পথচলতি বা আশপাশের কেউই এগিয়ে এসে তাঁর খোঁজ নেননি। ঘটনাস্থলের কিছুটা দূরেই একটি নার্সিংহোম রয়েছে। কিন্তু তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগী হননি কেউ। রাস্তাতেই ছটফট করতে করতে কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়।

এখানেই শেষ নয়। এর পরে এক ঘণ্টা ওই শিক্ষকের দেহ পড়েছিল প্রকাশ্য রাস্তায়। কাছেই ইংরেজবাজার থানা। কিন্তু কেউ সেখানে খবর পর্যন্ত দেননি। শেষে স্থানীয় কিছু যুবক মৃতের জামার পকেট থেকে মোবাইল ফোন বার করে তাঁর বাড়িতে খবর দেন। পরিবারের লোকজন এসে দেহ বাড়িতে নিয়ে যান। পুলিশের অবশ্য দাবি, খবর পেয়েই পুলিশ সেখানে যায়। স্থানীয় যুবক রবিউল ইসলাম, রতন সরকাররা জানান, তাঁরা থানায় খবর দেন। পুলিশ আসতে দেরি করায় মৃতের জামার পকেট থেকে মোবাইল বার করা হয়। কিন্তু সেটিতে চার্জ ছিল না। স্থানীয় একটি দোকানে ফোনে চার্জ দিয়ে তাঁর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। মৃতের ব্যাগের ভিতরে প্রেসক্রিপশন থেকে নাম জানা যায়।

Advertisement

মৃতের স্ত্রী নাজমা বিবি কামদিলোটা হাই মাদ্রাসার শিক্ষিকা ও একমাত্র ছেলে ১০ বছরের ইয়াসির হামিদ পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। মৃতের শ্যালক আখতার হোসেন বলেন, ‘‘ফোনে জামাইবাবুর মৃত্যুর খবর আমরা পাই। কিন্তু ভাবতেই পারছি না রাস্তায় পড়ে ওঁর মৃত্যু হল। অথচ কেউ সাহায্য করলেন না। এটা খুবই বেদনাদায়ক।’’ সামিউল্লার বাবা সহিদুর রহমান বলেন, ‘‘মৃত্যুর আগে ছেলের পাশে কেউ দাঁড়াননি। খুবই কষ্ট হচ্ছে।’’ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগারিক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘সমাজ দ্রুত বদলাচ্ছে। আমরা যে এখন মূল্যবোধটাও হারিয়ে ফেলছি, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।’’ স্কুলশিক্ষক বিপ্লব গুপ্ত বলেন, ‘‘এমন ঘটনা যে কারও ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে। কিন্তু কেউ এগিয়ে না আসায় যে ভাবে ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে তা খুবই মর্মান্তিক।’’ মালদহ কলেজের সমাজবিদ্যা বিভাগের ছাত্র অর্ণব মণ্ডল বলেন, ‘‘এ দিন শহরের বুকে যা ঘটল তা অত্যন্ত অমানবিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন