মনে হচ্ছিল মহাদেবের মতো স্ত্রীকে কাঁধে নিয়ে লন্ডভন্ড করি সব

দিনমজুরি করি। তাই সারা দিনের হাড় ভাঙা পরিশ্রমের পর সন্ধে হতে না হতেই ঘুম চলে আসে চোখে। শনিবার অবশ্য একটু দেরি করেই বাড়ি ফিরেছিলাম।

Advertisement

নির্যাতিতার স্বামী

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৪৭
Share:

উদ্বেগ: ধূপগুড়িতে গ্রামবাসীদের উদ্বেগ কাটছে না। নিজস্ব চিত্র

দিনমজুরি করি। তাই সারা দিনের হাড় ভাঙা পরিশ্রমের পর সন্ধে হতে না হতেই ঘুম চলে আসে চোখে। শনিবার অবশ্য একটু দেরি করেই বাড়ি ফিরেছিলাম। বাজার থেকে কেজি দুয়েক চাল আর কিছু আনাজপাতি কিনে রাত আটটা নাগাদ বাড়ি যাই। ঘরে ঢুকে দেখি সাত মাসের মেয়েটা মেঝেতে গড়াগড়ি করে কাঁদছে। আর মেজো মেয়েটা ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। বিছানায় মন খারাপ করে বসেছিল বড় ছেলেটা। আমাকে দেখে ছুটে এসে বলল ‘‘মা তো নেই বাড়িতে।’’ প্রথমে ভাবলাম বুঝি কোনও প্রতিবেশীর বাড়িতে বসে গল্প গুজব করছে। কিন্তু অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও ও ফেরেনি। বাচ্চাগুলোও তখন খিদের জ্বালায় কান্নাকাটি শুরু করেছে। শেষমেষ একটা কুপি জ্বালিয়ে বেরিয়ে পড়ি বউটাকে খুঁজতে। একেই শীতের রাত। তার উপর গ্রামের মানুষ একটু আগেভাগেই ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু উপায় নেই বউটাকে তো খুঁজতে হবে। বাধ্য হয়ে পাড়ার দু-চারজনকে ঘুম থেকেও ওই রাতে ডেকে তুললাম। কিন্তু কেউই সঠিক কিছু বলতে পারল না। শেষে বাড়ির কাছে চা বাগানটার দিকে এগিয়ে গেলাম। ঝোপঝাড়েও খুঁজলাম খানিক্ষণ। কিন্তু বউটাকে কোথাও পেলাম না।

Advertisement

যখন ওকে দেখতে পেলাম, চোয়ালটা শক্ত করে মাটি থেকে কোনওমতে বউকে ঘাড়ে তুলতেই বউ যেন একবার চোখ খুলে তাকাল। তারপর মুখটা বাড়িয়ে কানের সামনে ফিসফিস করে ও যা বলল তা শোনার মতো শক্তি কোনও স্বামীর আছে কি না জানি না। বউকে কাঁধে তোলার সময় ওর পা বেয়ে মাটিতে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছিল। এক সময় মনে হচ্ছিল মহাদেব যেমন সতীকে ঘাড়ে নিয়ে সব কিছু লন্ডভন্ড করেছিলেন। আমিও তেমনি সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিই। কিন্তু পারলাম না। ওদের টাকা আছে। পেছনে পার্টি আছে। আর আমরা হাভাতে। ঘরের বিছানায় শুইয়ে দিতেই মেজো মেয়েটা মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল। সারা রাত না খেয়ে থাকতে থাকতে দুধের মেয়েটা একসময় ঝিমিয়ে পড়ল। ওর এই অবস্থা দেখে কী করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তাই ছুটে যাই গ্রাম পঞ্চায়েত সঞ্জয় রায়ের বাড়ি। তাঁকে সব খুলে বলি। কিন্তু উনি বলেন এ সব থানা পুলিশের থানায় যেতে। কিন্তু থানা বা হাসপাতাল যাওয়ার মতো টাকাও তখন হাতে নেই। বাধ্য হয় এক প্রতিবেশীর কাছে হাত পাতি। তিনি একশো টাকা দেন। ওই টাকায় ভ্যান ভাড়া করে আট কিলোমিটার দূরে ধূপগুড়ি হাসপাতালে বউটাকে ভর্তি করি৷

জমির ভাগ নিয়ে আমাদের দুই পরিবারের ঝগড়া ছিল। কিন্তু তার জন্য আমার নিরীহ বউটাকে যেভাবে ওরা অত্যাচার করল তা মেনে নিতে পারছি না। মায়ের দুধ না পেয়ে আমার ছোট মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ও জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি। বাকি দুই ছেলে মেয়ে বাড়িতে আছে। ওরা কি খাচ্ছে, পড়ছে তা-ও জানি না। বউটা যদি সুস্থ হয় তাহলে ছেলেমেয়েগুলো বাঁচবে। কিন্তু যারা আমার এই সর্বনাশ করল তাদের যেন কড়া শাস্তি দেয় প্রশাসন।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন