রাজ্যস্তরে তিন খুদের সাফল্য

কারও বাবা বিড়ি বাঁধে, কারও বাবা পণ্যবাহী ট্রাকে মাল তোলা-নামানোর কাজ করেন। আবার কারও বাবা পুকুর থেকে জলসিঙারা তুলে বাজারে বিক্রি করে দিন চালান। মায়েরাও দিনমজুরির কাজ করেন। মালদহের এমন তিন পরিবারের ছেলেমেয়ে রাজ্য প্রাথমিক স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়ে জেলার মুখ উজ্জ্বল করল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:৫০
Share:

পদকজয়ী: কলকাতায় শনিবার মালদহের তিন খুদে বিজয়ী। (বাঁ দিক থেকে) মুসরেজাহান, প্রণব মণ্ডল এবং ছোটন ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

কারও বাবা বিড়ি বাঁধে, কারও বাবা পণ্যবাহী ট্রাকে মাল তোলা-নামানোর কাজ করেন। আবার কারও বাবা পুকুর থেকে জলসিঙারা তুলে বাজারে বিক্রি করে দিন চালান। মায়েরাও দিনমজুরির কাজ করেন। মালদহের এমন তিন পরিবারের ছেলেমেয়ে রাজ্য প্রাথমিক স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়ে জেলার মুখ উজ্জ্বল করল।

Advertisement

শুক্র ও শনিবার কলকাতার সল্টলেকের সাই স্পোর্টস কমপ্লেক্সে এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হল। রাজ্য স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বি গ্রুপে লং জাম্পে সোনা পেয়েছে কালিয়াচক ২ ব্লকের নিউ পটলডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মুসরেজাহান। তাঁর বাড়ি পটলডাঙা গ্রামে। বাবা মানেস শেখ বিড়ি বেঁধে সংসার চালান। অভাবের সংসার, তাই বাড়ির কাছেই নানির (দিদা) বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে সে। মুসরেজান জানায়, সে স্কুলের মাঠ ও নানির বাড়ির পাশে আমবাগানে খেলাধুলোর চর্চা করে। মেয়ের সাফল্যে খুশি পরিবার থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষকরাও। বাবার মন্তব্য, ‘‘ভাবতেই পারছি না, মেয়ে এমন সাফল্য পাবে। সবটাই স্কুলের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় হয়েছে।’’ রতুয়ার সামসির গোপালপুর প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র প্রণব মণ্ডল এ দিন ২০০ মিটার দৌড়ে সোনা ও ১০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। তার বাড়ি সামসির গোপালপুর গ্রামেই। তার বাবা উত্তম গ্রামে গ্রামে ঘুরে পুকুর থেকে জলসিঙারা তুলে বিক্রি করেন। ছেলের সাফল্যের খবর শুনে তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে ভাল খাবার দিতে পারি না। তার মধ্যেও ও সফল হওয়ায় আমরা খুশি।’’ হাই জাম্পে রৌপ্যপদক পেয়েছে কালিয়াচক ৩ ব্লকের সাইলাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছোটন ঘোষ। সাইলাপুর গ্রামেই তাদের বাড়ি। বাবা রাম ঘোষ দিনমজুর। গ্রামের পাশেই রয়েছে মহদিপুর আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্র। সেখানে পণ্যবাহী ট্রাকে মাল ওঠা-নামানোর কাজ করেন রামবাবু। ছোটন বলল, ‘‘স্কুলের মাঠেই অনুশীলন করি।’’ রাম জানান, অর্থাভাবে ছেলেকে পেট পুরে খাওয়াতে পারেন না। তবুও ছেলে সফল হওয়ায় খুব খুশি।

জেলায় সফল হলেও রাজ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কোনওবারই সেভাবে সাফল্যের মুখ দেখে না জেলা। সে কারণে এবার জেলা স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শেষে সফল খেলোয়াড়দের জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের তরফে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সংসদের চেয়ারম্যান আশিস কুণ্ডু বলেন, ‘‘জেলার খুদে প্রতিযোগীরা যাতে রাজ্যস্তরে সফল হয় সে কারণে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ শিবির এবারে কিছুটা হলেও কাজে এসেছে।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন