ধারেই চলছে মিডডে মিল।
এতদিন ভরসা ছিল বাকির খাতা। কিন্তু বাকিতে আর কতদিন? পুরোনো ঋণ না শুধলে, নতুন মাসে কী ধারে জিনিস মিলবে, এই আশঙ্কাতেই রয়েছেন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকরা।
ধারে সব্জি-আনাজ না পাওয়া গেলে মিড-ডে মিল রান্নাও হবে না বলে বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে জানিয়ে দিয়েছে একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী মিড-ডে মিলের টাকা স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা পড়ে। সমস্যা তৈরি হয়েছে স্কুলের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা নিয়ে সব্জির দোকানে চেক বা নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে টাকা মেটানো সম্ভব হচ্ছে বা বলে জানিয়ে স্কুল শিক্ষকদের প্রশ্ন, বাজার না হলে মিড ডে মিলে রান্না কী হবে?
মালদহের বহিবপুর ব্লকের কথাই ধরা যাক। সব স্কুলই মিড ডে মিলের খাতে টাকা পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে পারেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। ব্লকের বেশিরভাগ স্কুলের টাকা জমা রয়েছে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায়। সেই ব্যাঙ্কগুলি পাঁচশো থেকে এক হাজারের বেশি টাকাই দিতে পারছে না বলে অভিযোগ। সমস্যার কথা জানেন বিডিও ফুর্বা দোরজি শেরপাও। তিনি জেলার লিড ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন। আলোচনায় অবশ্য ভরসা পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কলাইবাড়ি প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা প্রায় চারশো ছুঁইছুঁই। মিড-ডে মিলের জন্য সপ্তাহে অন্তত সাড়ে আট হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেশ কিছুদিন ব্যাঙ্কে লাইন দিলাম। কিন্তু এত টাকা তো ব্যাঙ্ক দিচ্ছে না। সব্জির দোকানে বাকি খাতা চালু করেছিলাম। কিন্ত গত মাসের টাকা শোধ হয়নি, নতুন করে বাকি দিতে চাইছে না অনেকেই।’’ ওই ব্লকেরই ঋষিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাহারগোলা নিম্নবুনিয়াদী স্কুলের শিক্ষক প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘মহা সমস্যায় পড়েছি। ব্যাঙ্কে লাইন দিতে সময় লাগছে। তারপরে বাকি কোথায় পাব তা খুঁজতে যেতে হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো কখন হবে তাই এখন চিন্তা।’’
নগদের গেরোয় মিড-ডে মিল নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরেও। প্রাথমিক এবং শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলি ধার করে নভেম্বর মাসজুড়ে মিড-ডে মিলের রান্না চালিয়ে ডিসেম্বরের শুরুতেই বিপাকে পড়েছেন। জেলার তপন ব্লকের পূর্বচক্রের অধীন ৫৬টি প্রাথমিক স্কুল এবং অন্তত ২৯টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র আগামী সপ্তাহ থেকে মিড-ডে রান্না বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শিক্ষকেরা দাবি করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষক রঞ্জন ঘোষ, জয়ন্ত সরকার, সুকান্ত চৌধুরীরা জানিয়েছেন, আগের টাকা না মেটালে রান্নার জ্বালানি কাঠও সরবারহ করা হবে না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দিয়েছেন। — নিজস্ব চিত্র