ফিরিয়ে দিচ্ছে ব্যাঙ্ক, টাকা নিয়ে নাজেহাল

সীমান্ত এলাকায় কৃষিকাজ, ক্ষুদ্র ব্যবসা সবকিছু এখন লাটে উঠেছে। সবাই এখন ব্যাঙ্কমুখী। ব্যাঙ্কে গিয়েও কোন সুরাহা হচ্ছে না। একে ফর্ম পূরণ করার ঝামেলা। তার পরও আবার টাকা পাচ্ছেন না অনেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিবাড়ি শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৮
Share:

সীমান্ত এলাকায় কৃষিকাজ, ক্ষুদ্র ব্যবসা সবকিছু এখন লাটে উঠেছে। সবাই এখন ব্যাঙ্কমুখী। ব্যাঙ্কে গিয়েও কোন সুরাহা হচ্ছে না। একে ফর্ম পূরণ করার ঝামেলা। তার পরও আবার টাকা পাচ্ছেন না অনেকে।

Advertisement

১০০ দিনের কাজের সুবাদে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের অনেকের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকলেও ব্যাঙ্কে যাওয়ার রেওয়াজ কম। ফলে সবাই যা টাকা পান বড় নোট থাকার সুবাদে বাড়িতেই রেখে দেন। এই নিয়মই সকলে মেনে চলেন। তা সে ক্ষুদ্র চাষী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যেই হোন না কেন। বাড়িতে টাকা রাখার ফল গুনতে হচ্ছে সবাইকে। কাজকর্ম ফেলে সবাই ব্যাঙ্কে দৌড়চ্ছেন। সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা পাল্টাতে না পেরে অনেকেই ফেরত আসছেন। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

হলদিবাড়ি থানার দেওয়ানগঞ্জের বাসিন্দা হলদিবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কমল রায় বলেন, “সীমান্ত এলাকার লোকজনের নোট বাতিলের কথা বুঝতে সময় লেগেছে। তারপর ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা বদল করা যাবে শুনে আশ্বস্ত হয়েছেন। এখন ব্যাঙ্কে গিয়েও টাকা না পেয়ে তারা হতাশ হচ্ছেন।” দেওয়ানগঞ্জের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নীরদচন্দ্র রায় বাড়িতে থাকা কয়েকটি ৫০০ টাকার নোট পাল্টাতে দেওয়ানগঞ্জের ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন। সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা পাল্টাতে পারেননি। ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিয়েছে তাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই। হতাশ নিরোদ বাবু বলেন, “এই বয়সে এই হয়রানি আর টেনশন ভাল লাগে না।”

Advertisement

শুধু নীরদবাবুই নন, দেওয়ানগঞ্জের চাষি ভোলানাথ বিশ্বাসেরও এই অবস্থা। এখন টোম্যাটো লাগানোর সময়। দু’ বিঘা জমিতে টমেটোর চারা বুনেছেন। সারাদিন পরিচর্যা দরকার। গজিয়ে ওঠা জঙ্গল সাফাই থেকে কীটনাশক দেওয়া, সবকিছুই দরকার। এখন সব শিকেয়। বাড়িতে বেশ কিছু জমানো টাকা রেখে দিয়েছিলেন। কোনও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট তার নেই। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে তাঁর ব্যাঙ্কে দৌড়ঝাঁপ। কিন্তু কোনও মতেই একবারে সব টাকা পাল্টানোর রাস্তা দেখছেন না। কারণ ব্যাঙ্ক থেকে যে টাকা পাল্টে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে তা অতি নগণ্য।

হলদিবাড়ির ভারত বাঙলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা পারমেখলিগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, হেমকুমারী, দক্ষিণ বড়হলদিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে একই হাল। হেমকুমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের সিঞ্জারহাটে এন্দাদুল হক প্রামানিকের একটা ছোট কাপড়ের দোকান আছে। টাকা পাল্টানোর জন্য এখন তার দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তিনি বলেন, “এমন কিছু টাকা নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাল্টাতে চাই। দোকান খুলেই বা লাভ কি? বিকেলের পর দোকান খুলছি। কোনও ক্রেতা নেই। সবাই আমার মত টাকা পাল্টানোর জন্য দৌঁড়চ্ছে।” হেমকুমারী পঞ্চায়েতের সরকার পাড়ার বাসিন্দা ক্ষুদ্র চাষি আবু সালেক সরকারের ব্যাঙ্কে কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। বাড়িতে আছে একগুচ্ছ জমানো টাকা। সবই এক হাজার টাকার নোট। ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন। আপাতত কোনও সুরাহা হয়নি।

পারমেখলিগঞ্জের নয়ারহাটের বাসিন্দা বিজেপি নেতা বঙ্কিম রায় হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “১০০ দিনের কাজের সুবাদে গ্রামের নিরানব্বই ভাগ লোকের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে। জমানো টাকা অ্যাকাউন্টে ভরে দিলেই সমস্যা মিটে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকার যা করেছেন ভালর জন্যই করেছেন। কারুর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন