টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে জোড়া সিদ্ধান্ত নিল এসজেডিএ।
টাকার অঙ্ক কম-বেশি যাই হোক না কেন সমস্ত কাজের বরাত ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে টেন্ডারে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থাগুলির সঙ্গে যদি একই ব্যক্তির সরাসরি অথবা পরোক্ষ যোগ থাকে তবে ওই সমস্ত সংস্থাগুলিকেই কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।
শনিবার নতুন সদস্যদের নিয়ে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ)-এর প্রথম বোর্ড মিটিংয়ে এই দুই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী আগেই ঘোষণা করেছিলেন, দুর্নীতি রুখতে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আমূল বদল আনা হবে। প্রথম বোর্ড মিটিঙে সেটাই তিনি শুরু করলেন বলে সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, টেন্ডার আহ্বান করে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনেই জানিয়ে দেওয়া হবে। একই ব্যক্তির নাম বিভিন্ন এজেন্সিতে পাওয়া গেলে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। জানানো হয়েছে, সন্দেহ হলেই এজেন্সির সঙ্গে যুক্তদের ডেকে জেরা করা হবে। কার নামে এজেন্সি ছিল, কে কাজের দেখভাল করছেন, কে সই করে চেক নিচ্ছেন সবই যাচাই করে দেখা হবে। সংস্থার চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্বচ্ছতা আনতেই এই সিদ্ধান্ত। পূর্ব অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যদি যথাযথ নজরদারি থাকে এবং নানারকম রক্ষাকবচ থাকে তবে দুর্নীতির প্রবণতা কমে যায়।’’
এসজেডিএ’র বিভিন্ন প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকারও বেশি দুর্নীতির যে অভিযোগ রয়েছে তাতে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করে তা করার অভিযোগও ওঠে। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার বছর দুয়েকের মধ্যেই আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে এসজেডিএ’র তরফেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি প্রকল্পে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া ব্যবহার করেই জাল নথি তৈরির মাধ্যমে পছন্দের সংস্থাকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ দিনের বোর্ড মিটিঙে টেন্ডার প্রক্রিয়ার সেই ফাঁক বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে দাবি।
এজেডিএ’র একটি সূত্রই জানিয়েছে, সৌরভবাবু পূর্ব অভিজ্ঞতা বলতে সংস্থার অতীত দুর্নীতির কথাই ইঙ্গিত করেছেন। সে কারণেই রাজ্য সরকারও সংস্থার বোর্ডে শুধুমাত্র আমলাদের রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দিনের বৈঠকে নগরোন্নয়ন দফতর এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিনিধি, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার জেলাশাসক, শিলিগুড়ির মহকুমাশাসকরা ছিলেন। বৈঠকে বিধাননগরে আনারস এবং ফুলবাড়িতে টোম্যাটো প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়তে টেন্ডার ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্বচ্ছতা দাবি করলেও প্রশ্নও রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে সংস্থার তৎকালীন চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দিয়েছিল সরকার। সংস্থার প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণকুমার, বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সপ্তর্ষি পাল, ঠিকাদার শঙ্কর পাল, অজয় মৈত্র সুব্রত দত্ত-সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ওই মামলা এখন সিআইডি দেখছে। ধৃতেরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। দুর্নীতি কাণ্ডে ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে ইঞ্জিনিয়র, আধিকারিকদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত কিছু ঠিকাদার এখনওর নানা কাজে বেনামে জড়িয়ে রয়েছেন বলেও অভিযোগ। আধিকারিকদের একাংশের দাবি, ‘‘ঘর সাফসুতরো করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একটু অপেক্ষা করলে আরও অনেক কিছু জানা যাবে।’’