বধূর ‘ভূত’! ভয়ে কাঁটা ময়নাগুড়ির বার্নিশ

ময়নাগুড়ির বার্নিশের সাধারণ মানুষ এখন এলাকা থেকে ‘ভূত’ তাড়াতে পারলেই যেন বাঁচেন৷ সেই দলে আছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যও৷

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

একটি তেঁতুল গাছ৷ অন্যটি কদম৷ দু’টি গাছের মধ্যে দূরত্বও কম নয়৷ একটির অবস্থান উল্লারডাবরিতে তো, অন্যটি রয়েছে জল্পেশের কাছে৷ দূরত্ব সত্ত্বেও কিন্তু এই দুই গাছকে মিলিয়েছে ভূতের আতঙ্ক।

Advertisement

ময়নাগুড়ির বার্নিশের সাধারণ মানুষ এখন এলাকা থেকে ‘ভূত’ তাড়াতে পারলেই যেন বাঁচেন৷ সেই দলে আছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যও৷

গত সোমবার দুপুরে ওই এলাকায় এক বধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ তারপরেই ভূতের আতঙ্ক চেপে বসে এলাকায়৷ কিন্তু পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পরিবারের কোনও সমস্যার কারণে আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন বধূ। বিজ্ঞান মঞ্চের এক সদস্য ও এলাকার অনেক যুক্তিবাদী মানুষের দাবি, আত্মহত্যার ঘটনার পিছনে অন্য কারণ থাকতে পারে। সেইমতো তদন্তও দাবি করেছেন তাঁরা। যে বধূ মারা গিয়েছেন তাঁর নাম বিদেশি মজুমদার (৩১)৷ বছর ষোলো আগে উল্লারডাবরির বাসিন্দা ভজন মজুমদারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়৷

Advertisement

আরও পড়ুন: হর্ন বাজাতে নিষেধ করায় হামলার অভিযোগ

ঘটনার সূত্রপাতটা হয়েছিল একটি তেঁতুল গাছকে দিয়ে৷ যা জল্পেশের কাছে নীরেন্দ্রপুরে অবস্থিত৷ কিন্তু ঘটনার সমাপ্তি ঘটেছে উল্লারডাবরিতে থাকা কদমগাছে৷ যে গাছে বহু যুগ থেকেই ‘ভূত’ রয়েছে বলে বিশ্বাস স্থানীয়দের অনেকের৷ বাসিন্দারা জানান, বিদেশিদেবীর বাবার বাড়ি জল্পেশের কাছে নীরেন্দ্রপুরে৷ ওই বধূর দেওর সুকুমার মজুমদারের দাবি, ‘‘বিয়ের পর পর দাদা বৌদির সঙ্গে একবার শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিল৷ তখন সেখানে থাকা তেঁতুল গাছ থেকে একটা ভূত দাদার ওপর ভর করে৷ দাদাকে তখন বাড়িতে আটকে রাখাই অসম্ভব ছিল৷’’ তাঁর বৌদির পরিবার তাঁর দাদাকে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে ঠিক করেন বলে সুকুমারের দাবি।

কিন্তু প্রায় ষোলো বছরের আগের ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনার মিল কোথায়? স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য গণেশ মজুমদার বলেন, ‘‘ভজনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী কোনও সমস্যা ছিল না৷ ওদের সংসারেও অশান্তি নেই৷ কিন্তু কয়েকদিন থেকেই ভজনকে নাকি ওর স্ত্রী বলছিল, কদম গাছটা তাঁকে ফাঁসি দিতে ডাকছে৷’’ ভজনকে যখন ‘ভূতে’ ধরেছিল তখন তিনিও একই কথা বলতেন বলে দািব গণেশের৷ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি কদম গাছে সাদা কাপড় পড়ে কেউ বসে থাকে৷’’

এলাকার যুক্তিবাদী মানুষদের দাবি, অনেকক্ষেত্রে এই ধরনের আত্মহত্যার ঘটনার পিছনে কোনও গোপন কারণ থাকতে পারে। অনেকসময়েই মৃত্যুর কারণ বা কোনও অপরাধকে চাপা দেওয়ার জন্য ভূতের গল্প ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই এক্ষেত্রেও সঠিক তদন্তের দাবি তুলেছেন তাঁরা।

স্ত্রী বিয়োগের জেরে ভজন এখন কথা বলার মত অবস্থায় নেই৷ তাঁর ভাই সুকুমার অনড় রয়েছেন তাঁর অবস্থানেই। তাঁর মতে, মৃত্যুর পিছনে ভূতপ্রেতের কারণই রয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশেরও একটি অংশ বলছেন, তাঁদের মনে হয়েছে পারিবারিক কোনও কারণে অবসাদ থেকে এমনটা করে থাকতে পারেন ওই বধূ৷ যার ফলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খুঁজতে আরও তদন্ত প্রয়োজন বলে জানান তাঁরা। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ঘটনায় একটা অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে৷ ভূতের কথা কেউ পুলিশকে বলেননি৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন