পরীক্ষা: হাসপাতালে পরীক্ষা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুপ্রিয়া রায়ের ডেঙ্গি হয়নি। তার ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষার ফলও নেগেটিভ এসেছে। শুক্রবার সে পরীক্ষাও দিয়েছে। তার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছে বুলবুলি রায় নামে এক ছাত্রীও। তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল।
সুপ্রিয়ার এখনও জ্বর রয়েছে। আর সে কারণেই মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে ভয় বাড়ছে কোচবিহারে। শীত কমতেই জেলা জুড়ে প্রচণ্ড বেড়েছে মশার দাপটও।
সকাল কিংবা সন্ধে বাড়ির ব্যালকনি থেকে বারান্দা কোথাও নিশ্চিন্তে দু’দণ্ড বসবার উপায় নেই। ঘরেও দিন-রাত সতর্ক থাকতে হচ্ছে। তারপরেও ফাঁকফোকর পেলেই দলে দলে ঢুকে পড়ছে মশার দল। উপদ্রব এতটাই বেড়েছে যে, ঘরে ঘরে ধূপকাঠি, তেল থেকে বৈদ্যুতিন ব্যাটের মতো অস্ত্রশস্ত্র মজুতের হিড়িক শুরু হয়েছে। মাসে গড়ে ৫০০ টাকা মশা নিধনের বাজেট রাখছেন অনেকে। কারণ মশা মারার ধূপের এক একটি কয়েলের দাম ১৫ টাকা। এক দিনে একটি কয়েল শেষ হয়ে যায়।
মশার দাপটে ফিরছে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার আতঙ্কও। তাই পুরসভা থেকে স্বাস্থ্য দফতর—সব দফতরেরই ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই ভয় করছেন, বর্ষায় মশার প্রকোপ আরও বেড়ে যাবে। প্রশাসন সূত্রের দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের এখন থেকেই তাই বাড়তি সতর্কতা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। পুরসভায় ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্তাদের মাধ্যমে নজরদারির তালিকা করে অভিযানের তারিখ চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে।
কোচবিহার পুরসভা দিয়ে ওই কাজ শুরুর কথা। জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “সব সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে।” কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় জানান, আগামী সপ্তাহে সব পুরসভার চেয়ারম্যান, প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে মশা মারার অভিযান, মূল্যায়নে বৈঠক হবে।
বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, নাম কে ওয়াস্তে পুরসভাগুলির কিছু এলাকায় মশা মারতে কামান দাগছে, তেল স্প্রে করছে। সর্বত্র নর্দমা নিয়মিত সাফাই হয় না। কোচবিহার জুড়ে কালর্ভাট সংস্কার ঢিমেতালে চলায় নর্দমায় জল জমে থাকার সমস্যা বেড়েছে। বিজেপির কোচবিহার শহর সভাপতি বিরাজ বসু বলেন, “সর্বত্র নিয়মিত অভিযান, স্প্রে হচ্ছে না।”
কোচবিহার পুরপ্রধান ভূষণ সিংহ অবশ্য বলেন, “শহর জুড়ে নর্দমা, আবর্জনা সাফাই হচ্ছে। মশা মারতে অভিযানও জোরদার করা হচ্ছে।” দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ জানান, সব ওয়ার্ডে ব্যাটারির মেশিনে মশা নিধনে স্প্রে করছেন।
বাসিন্দারা অবশ্য বলছেন, মশার কামড়ে চমকে উঠছেন। কোচবিহারের রাজীব পালের কথায়, “ফি মাসে ৫০০ টাকা মশা মারার জিনিস কিনতেই বাজেট রাখছি। তাতেও নিশ্চিন্ত নই।” গত বছর ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া সহ মশাবাহিত নানা রোগ সংক্রমণে আক্রান্ত হন দুই শতাধিক।