ছোট ইলিশে সাধ মিটছে না উত্তরের

উত্তরের বাজার থেকে আপাতত উধাও চকচকে রুপোলি ইলিশ। তার বদলে যা রয়েছে, তাকে ইলিশ বলতে আপত্তি রয়েছে প্রকৃত ইলিশপ্রেমীর। ভরা বর্ষা ইতিমধ্যেই পা রেখেছে উত্তরবঙ্গে। কিন্তু রসনাতৃপ্তির প্রমাণ সাইজের ইলিশের দেখা মেলেনি। সামান্য পরিমাণ ডায়মন্ডহারবারের ইলিশই সারা বছরের ইলিশপ্রেমীদের পাতে ভরসা জুগিয়ে থাকে।

Advertisement

সংগ্রাম সিংহ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৩
Share:

শিলিগুড়ি রেগুলেটেড মার্কেটের পাইকারি মাছ বাজারে শেষ সম্বল ইলিশের পসরা। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তরের বাজার থেকে আপাতত উধাও চকচকে রুপোলি ইলিশ। তার বদলে যা রয়েছে, তাকে ইলিশ বলতে আপত্তি রয়েছে প্রকৃত ইলিশপ্রেমীর। ভরা বর্ষা ইতিমধ্যেই পা রেখেছে উত্তরবঙ্গে। কিন্তু রসনাতৃপ্তির প্রমাণ সাইজের ইলিশের দেখা মেলেনি। সামান্য পরিমাণ ডায়মন্ডহারবারের ইলিশই সারা বছরের ইলিশপ্রেমীদের পাতে ভরসা জুগিয়ে থাকে। আষাঢ়ের শেষ হয়ে গেলেও এ বারেও ‘কিংসাইজ’ ইলিশের খোঁজে মরিয়া উত্তরবঙ্গবাসী। আপাতত ছোট ইলিশেই রসনার পরিতৃপ্তি ঘটাতে হচ্ছে তাঁদের।

Advertisement

শিলিগুড়ি রেগুলেটেড মার্কেটে শেষ ইলিশের গাড়িটি ঢুকেছে গত শনিবার। তারপর আর ঢোকেনি ইলিশের ট্রাক। কবে ঢুকবে আপাতত সে প্রশ্ন ইলিশ আমদানিকারী থেকে খুচরো ব্যবসায়ীদেরও। রেগুলেটেড মার্কেটের মাছ ব্যবসায়ীদের সম্পাদক বাপি চৌধুরীর দাবি, দক্ষিণবঙ্গে নিম্নচাপের কারণে আপাতত ট্রলারগুলি মাছ ধরতে যেতে পারছে না। তাই মাছের আমদানি বন্ধ। চাহিদা থাকলেও কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘আর দু’একদিন আমদানি বন্ধ থাকলে সামান্য পরিমাণ যে ইলিশ রয়েছে তার দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যেতে পারে।’’ শনিবার মোট ছ’শো কুইন্টাল ডায়মন্ডহারবারের ইলিশ ঢুকেছে উত্তরের মার্কেটে। নামতেই তা চালান হয়ে গিয়েছে শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারের সঙ্গে, জলপাইগুড়ি, ইসলামপুর, রায়গঞ্জ, কোচবিহার সহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে। এই সময় যা চাহিদা থাকে, যোগানের পরিমাণ তার চেয়ে অনেক কম বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

শিলিগুড়ির দু’একটি বাজার ছাড়া বড় ইলিশের তেমন দেখা মেলেনি। বিধান মার্কেটে ছ’শো গ্রাম থেকে সাতশো গ্রাম ইলিশ ৮শো থেকে ১২শো টাকা প্রতি কেজি পর্যন্ত বিকিয়েছে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ১৫-১৮ শো টাকায় বিকিয়েছে। তবে অন্য বাজারে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বেশি দেখা যায়নি। সুভাষপল্লি বাজারে আধ কিলোর চেয়ে ছোট ইলিশ ছিল ৪শো থেকে পাঁচশো। একটু বড় হলে ৮শো পর্যন্ত। গেটবাজার, জলপাই মোড় বাজার, শান্তিনগর বাজার, ফুলেশ্বরী বাজার, জলেশ্বরী বাজার, ঘোগোমালি বাজার, চম্পাসারি বাজার, তিনবাত্তি মোড়, রবীন্দ্রনগর বাজারে ইলিশ মাছের দাম ঘোরাঘুরি করেছে ৪শো থেকে ৬শো বা একটু বড় হলে ৮শোর মধ্যে। তবে সবই ছোট বা খোকা ইলিশ। ঘোগোমালি বাজারের এক ব্যবসায়ী তপন সরকার বলেন, ‘‘পাইকারি বাজারেই ইলিশ নেই। তাই বরফ দিয়ে রেখেই চালাতে হচ্ছে।’’ তবে এ ভাবে আরও দু-একদিন চললে দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিধান মার্কেটের বিশু ব্যপারী। কিন্তু তার পরেও ইলিশ গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে জানান তিনি।

ব্যবসায়ীরা খোঁজ নিয়ে জানিয়েছেন, দীঘা ও ওড়িশা থেকে আপাতত ইলিশ আমদানি হচ্ছে না। এই সময় কোলাঘাটেও ভাল ইলিশ পাওয়া গেলেও তা উত্তরবঙ্গে আসে না। উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিত দাস বলেন, ‘‘ইলিশের চাহিদা অনুযায়ী মাছের সরবরাহ কোনওকালেই থাকে না। তবে এবার সরবরাহ একটু বেশিই অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। বর্ষার মরসুমে পর্যাপ্ত ইলিশ না ঢুকলে ভোজনরসিকদের পাশাপাশি রাজস্বের একটা বড় অংশ মার খাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন