এই দুর্গা দেখতেই ভিড় জমছে দিনহাটায়।ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের বিশ্বের সব থেকে বড় দুর্গার কথা পৌঁছে গিয়েছিল তাঁদের কানেও। সেই থেকেই এমন একটা কিছু করে চমকে দেওয়ার ছক তৈরি করেছিল তাঁরা। সেই মতো বিয়াল্লিশ ফুটের দুর্গা তৈরি করে হইচই ফেলে দিয়েছেন ওঁরা। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন দিনহাটা মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকা দু’নম্বর পুলের ওই দুর্গা দেখতে ভিড় শুরু হয়েছে এখন থেকেই।
প্রতিদিন শহর ও গ্রামের নানা জায়গা থেকে মানুষ হাজির হচ্ছেন সেখানে। দুর্গা দেখে মনও যেন খুশিতে ভরে ওঠে তাঁদের। অনেককেই বলতে শোনা যায়, “কলকাতার থেকে পিছিয়ে নেই মফস্সলও।” দিনহাটার বাসিন্দা দিলীপ দাস যেমন তাঁর সাত বছরের নাতিকে নিয়ে ইতিমধ্যেই চক্কর কেটে এসেছেন ওই মণ্ডপ থেকে। তিনি বলেন, “এত বড় দুর্গা তো আমরা কখনও দেখিনি। তাই তার প্রতি একটা আকর্ষণ শোনার পর থেকেই তৈরি হয়েছে।” দিনহাটা ব্যায়াম বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিভুরঞ্জন সাহা বলেন, “মানুষ দেখছি ওই দুর্গা নিয়ে মেতে রয়েছে।”
ওই ক্লাবের এ বারে পঞ্চাশ বছর। তাই এ বার তাঁরা আয়োজনের কোনও খামতি রাখেননি। ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্তকুমার সরকার জানান, তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে সাতজন শিল্পী ওই প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। দুর্গা তৈরিতে ৩৫০ বাঁশ, ৪০ কেজি তার, ১ কুইন্টাল সুতলি, ৩ ট্রাক মাটি এবং সাড়ে পাঁচ হাজার খড়ের আঁটি প্রয়োজন হয়েছে। আয়োজকদের দাবি, কোচবিহার তো বটেই এমন বিশালাকার দুর্গা প্রতিমা উত্তরবঙ্গের কোনও জেলায় নেই। ওই প্রতিমার পাশাপাশি ভুটানের সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করেছে তাঁরা। মণ্ডপে ঢোকার মুখে ভুটান গেটের আদলে তোরণ থাকবে। তার মধ্যে দিয়েই মণ্ডপে ঢুকতে হবে। মণ্ডপের ভিতরে ভুটানের ড্রাগনের নানা দৃশ্য থাকবে। সেগুলি থার্মোকল, তুষ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। মহেঞ্জোদাড়ো ও হরপ্পার ইতিহাসও তুলে ধরা হবে সেখানে। সেখানকার নানা ছবিও রাখা হবে মণ্ডপে। সঙ্গে থাকবে চন্দননগরের আলো।
চতুর্থীতেই উদ্বোধন হবে পুজোর। অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দুঃস্থদের মধ্যে জামাকাপড় বিতরণ করা হবে। করা হবে
প্রসাদ বিতরণও।
আয়োজক দিনহাটা ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস অর্গানাইজেশন ক্লাবের সদস্যরা এখন থেকেই উৎসাহিত, “অন্যবারে সবাই শহরমুখী হয়। এ বারে যা দেখছি তাতে ভিড় সামলাতে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে।” কিন্তু দেশপ্রিয়ের বড় দুর্গার জেরে এত ভিড় হয়েছিল যে পুলিশ-প্রশাসন পুজোই বন্ধ করে দিয়েছিল।
এখানে তেমন কিছু রুখতে আয়োজকরা তৈরি তো? ক্লাবের সম্পাদক মনোরঞ্জন সরকার বলেন, “বড় দুর্গা নিয়ে নানা ঘটনা ঘটেছিল। সব খবরে কাগজে পড়েছি। আমরা অতিরিক্ত সতর্ক। পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি আছে। তারাও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।”