ভুতনিতে প্রসব বাড়াচ্ছে চব্বিশ ঘণ্টা ডাক্তার

জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, সত্তরের দশকে ভুতনি হাসপাতালে তিন শয্যা ছিল। কিন্তু ১৯৮৮ সাল নাগাদ মূলত ডাক্তারের অভাবেই সেটা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে গত বছরের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে শুধু বহির্বিভাগই চলছিল।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

ভুতনি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ১৩:১০
Share:

যত্ন: ভুতনির ঝকঝকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতিরা। নিজস্ব চিত্র

গঙ্গা, ফুলহর ও কোশি—এই তিন নদী দিয়ে ঘেরা মানিকচকের ভুতনি চরের হাসপাতালে ১০ শয্যা চালু হয়েছে গত বছরের ১৬ নভেম্বর। জেলা স্বাস্থ্য দফতরেরই রিপোর্ট বলছে, ওই হাসপাতালে শয্যা চালুর আগে গত কয়েক বছরে ভুতনি চরের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ছিল মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ। কিন্তু এই কয়েক মাসে সেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার পৌঁছে গিয়েছে ৯০ শতাংশে। ১০ শয্যার হাসপাতাল চালু করে কী ভাবে সাত মাসে এমন অসাধ্য সাধন হল, তা যেমন রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছে বিস্ময়ের, তেমনই ইউনিসেফের কর্তারাও অবাক। সম্প্রতি ইউনিসেফ এই হাসপাতালের পরিচালন পদ্ধতিকে দুর্গম এলাকায় রোল মডেল করার ব্যাপারে ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে।

Advertisement

জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, সত্তরের দশকে ভুতনি হাসপাতালে তিন শয্যা ছিল। কিন্তু ১৯৮৮ সাল নাগাদ মূলত ডাক্তারের অভাবেই সেটা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে গত বছরের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে শুধু বহির্বিভাগই চলছিল। ভুতনির ভৌগলিক অবস্থানের জেরে মূলত যাতায়াতের সমস্যার জন্য কোনও ডাক্তারই সেখানে যেতে বা থাকতে চাইতেন না। তাই ইচ্ছে থাকলে বা পরিকল্পনা করেও সেখানে শয্যা চালু করা যায়নি। তবে রাজ্যে প্রথম রোটেশনের মডেল চালু করেই ভুতনিতে বাজিমাত করা হয়েছে।

কেমন সেই মডেল ? স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ভুতনিতে এখন দু’জন ডাক্তারকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মানিকচক ব্লকেরই বাসিন্দা রাজেশ সাহা সেই হাসপাতালের স্থায়ী ডাক্তার এবং অপর জনকে পালা করে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সাত দিনের জন্য সেখানে পাঠানো হচ্ছে। এখন রয়েছেন সিলামপুর হাসপাতালের ডাক্তার আঞ্জুস পারভেজ আলম। দু’জন ডাক্তার পালা করে ২৪ ঘণ্টা সেখানে কাজ করছেন।

Advertisement

এ ছাড়া সেখানে চারজন নার্সকেও রোটেশনের ভিত্তিতে রাখা হয়েছে। তাঁরা একমাস করে ওই হাসপাতালে ডিউটি করছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ভুতনি হাসপাতালে অনেক ডাক্তার যেতে রাজি হতেন না। তাই রোটেশন পদ্ধতি চালু করে আমরা ভুতনির প্রায় এক লক্ষ মানুষের জন্য পরিষেবা চালু করতে পেরেছি। সব থেকে বড় কথা হল, প্রাতিষ্ঠিনিক প্রসবের হার ছিল ৫ থেকে ১০ শতাংশ, তা বেড়ে প্রায় ৯০ শতাংশ হয়েছে। আমরা এই ধারাবাহিকতাকে ধরে রাখতে চাই।’’

ভূতনির ডাক্তার রাজেশ সাহা বলেন, ‘‘শয্যা চালুর পর থেকে এই কয়েক মাসে এখানে ৬৪৩টি প্রসব হয়েছে। যা আগে ভাবাই যেত না।’’ মানিকচক ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়দীপ মজুমদার বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করে আমরা ভুতনির মানুষকে ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে পারছি। এটা বড় কথা।’’ এ দিকে সাফল্যের পাশাপাশি সমস্যাও রয়েছে। অন্তত আরও একজন ডাক্তার, দুজন নার্স, দুজন জিডিএ প্রয়োজন। দরকার জেনারেটর ও পাঁচিলেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন