ছড়ার ছন্দে ভাইদের ছুঁল পবিত্রা

হোমের দিদি ছড়া শিখিয়েছিলেন আগের রাতে। শনিবার সকালে ফোঁটা দেওয়ার সময় সকলের মুখে শোনা গেল   সেই ছড়াটাই। ‘আকাশে উলু বাজে...ভাইয়ের আয়ু একশো বছর বাড়ে’। তার পালা আসতেই ফ্রক পরা মেয়েটি এল, মুখ মাটির দিকে নামানো।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:০০
Share:

হোমের দিদি ছড়া শিখিয়েছিলেন আগের রাতে। শনিবার সকালে ফোঁটা দেওয়ার সময় সকলের মুখে শোনা গেল সেই ছড়াটাই। ‘আকাশে উলু বাজে...ভাইয়ের আয়ু একশো বছর বাড়ে’। তার পালা আসতেই ফ্রক পরা মেয়েটি এল, মুখ মাটির দিকে নামানো। হোমের দিদির কাছে জানতে চাইল, ‘‘আমি একটা অন্য ছড়া বলব?’’ অনুমতি পেতেই বলতে শুরু করল, ‘‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা...যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা।’’ বাড়িতে ভাইদের এই ছড়া বলেই ফোঁটা দিয়েছে এতদিন। কিন্তু এ বছর ভাই বা দাদারা অনেক দুরে। বদলে ফোঁটা দিতে হয়েছে হোমে অসা অপরিচিত অতিথিদের। চেনা ছড়ার ছন্দে যেন বাড়ির আবহটাকেই একবার ছুঁয়ে নিল পবিত্রা।

Advertisement

দিদির সঙ্গে ঘুরতে এসে স্টেশনে ‘হারিয়ে’ গিয়েছিল। মাস কয়েক আগে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয় বছর বারোর পবিত্রাকে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের চোখে পড়ায় প্ল্যাটফর্ম থেকে নিয়ে আসা হয় শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ায় বেসরকারি সংস্থার ওই হোমে। সেখানেই এ দিন হয়েছিল ভাইফোঁটার আয়োজন। ফোঁটা দেওয়ার পর অতিথি দাদাদের হাতে বোনেরা তুলে দিয়েছে মিষ্টির প্লেট। পবিত্রা জানিয়েছে, নিজের ভাই, দাদাকেও ফোঁটা দেওয়ার পরে এ ভাবেই মিষ্টি খাওয়াতো।

অনাথ এবং ভবঘুরে কিশোরীদের আশ্রয় এই হোমে প্রতি বছরই ভাইফোঁটার আয়োজন হয়। আমন্ত্রণ জানানো হয় পুলিশ-প্রশাসন সহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিদের। তাঁদেরই ফোঁটা দেয় হোমের আবাসিকরা। এ দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কেউ শিশির কুড়িয়েছে, কেউ বেলুন-রঙিন কাগজ দিয়ে ঘর সাজিয়েছে। ২১ জন আবাসিক রয়েছে এই হোমে। আমন্ত্রিতের সংখ্যা আরও বেশি। সকলকে ফোঁটা দিতে কয়েকজন মিলে চন্দন বেটেছে। ভাইফোঁটা উপলক্ষে এ দিন দুপুর এবং রাতে হোমে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সমাজকর্মী, তথা জেলা স্কুল ক্রীড়া পর্ষদের সভাপতি মদন ভট্টাচার্য। সরু চালের ভাত, ডাল, ঝিরিঝিরি আলু ভাজা, মুরগির মাংসের সঙ্গে দুপুরের মেনুতে ছিল চাটনি আর মিষ্টিও। রাতে মাংসের বদলে কাতলা মাছ। হোমের কো অর্ডিনেটর শেখর সাহা জানালেন, ‘‘ভাইফোঁটার দিন শুধু খাওয়াদাওয়া নয়, নাচ গানের অনুষ্ঠানও থাকে। মেয়েরা নিজেরা সন্ধেবেলায় গানের আসর বসায়।’’ হোমের তিনতলার ছাদে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। সকলকে ফোঁটা দেওয়ার পরে হাতের চন্দন দিয়ে ছাদের কংক্রিটের রেলিঙে টিপ এঁকে দিয়েছে পবিত্রা। সকাল থেকে অনেককে ফোঁটা দিয়েছে। আর প্রতিবারই ভাইয়ের কথা মনে পড়েছে। কংক্রিটের দেওয়ালে টিপ আঁকার সময়ে মনে মনে আবৃত্তি করেছে মায়ের শেখানো ছড়া, ‘ভাইয়ের কপালে...।’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন