মারল সচিন লাফ

ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন। সাড়ে তিন হাজারের মতো লোক হাজির হয়েছিল বেঙ্গল সাফারি পার্কে। সকাল থেকেই ভিড়ে উপচে পড়েছিল কচিকাঁচা, বয়স্কদের। নতুন বছরের হালকা মেজাজে ঘণ্টা দুই-তিন পার্কে ঘুরে এদিক ওদিক যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল সকলেরই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৭
Share:

ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন। সাড়ে তিন হাজারের মতো লোক হাজির হয়েছিল বেঙ্গল সাফারি পার্কে। সকাল থেকেই ভিড়ে উপচে পড়েছিল কচিকাঁচা, বয়স্কদের। নতুন বছরের হালকা মেজাজে ঘণ্টা দুই-তিন পার্কে ঘুরে এদিক ওদিক যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল সকলেরই। কিন্তু চিতাবাঘ সচিন পার্কের নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের বাইরে বার হয়ে বেপাত্তা হতেই বন্ধ করে এ দিনের মতো বন্ধ করে দেওয়া হয় সাফারি পার্ক। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে আপেক্ষ নিয়েই ফিরতে হয়েছে সবাইকে। পার্ক সূত্রের খবর, এর ফলে তাদের এ দিন ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত দর্শনার্থীরা এ দিন অপেক্ষার সময়টা কী ভাবে কাটালেন, তারই এক ঝলক।

Advertisement

পরিবার ১: শিবমন্দির

আপার কেজির ছাত্র আয়ুশ বর্মণ এবং তার দাদা পৃথ্বীরাজ বর্মণ বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছিল সাফারি পার্কে। পার্ক বন্ধ শুনে আয়ুশের আক্ষেপ, ‘‘ইস, যদি বাঘটিকে খাঁচার বাইরে দেখতে পেতাম, কী ভাল যে হত!’’ পাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন তাঁর মা ইলা রায় বর্মণ, ‘‘তুই পাগল নাকি! দেখছিস না কী ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটেছে। কাছে চলে এলে কী হবে?’’ পাশ থেকে আয়ুশের বাবা মনোরঞ্জন বর্মণের কণ্ঠস্বর: ‘‘এতটা দূর থেকে যানজট কাটিয়ে এলাম। চিতাবাঘটাই দেখা হল না। তোমরা আবার এই সব শুরু করলে। পার্ক না দেখেই ফিরে যেতে হবে এখন!’’

Advertisement

পরিবার ২: ইসলামপুর

বছর আটেকের মেহেক সকাল থেকেই চিড়িয়াখানা দেখতে আসছে বলে আনন্দে ছিল। কিন্তু বেশ ধাক্কা লাগে যখন পার্ক কর্তৃপক্ষ টিকিটের পয়সা ফেরত দিতে শুরু করেন। তার বাবা মানস বড়ুয়া কাউন্টারের সামনে থেকে ঘুরে আসার পরেই হতাশ মুখে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘‘হবে না!’’ খানিকক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে মেহেক। তার পর মুখ কাচুমাচু করে অস্ফুট শব্দে জিজ্ঞাসা করে, ‘‘কেন?’’ ছেলের প্রশ্নের জবাবে মানসবাবু: ‘‘পার্কের দরজা আজকের মতো বন্ধ। চিতাবাঘ বেরিয়ে গিয়েছে খাঁচা থেকে।’’ কিন্তু অবুঝের মতো করে নিজের কথাতেই অনড় মেহেক। জেদ করতে থাকে, ‘‘চিতাবাঘ দেখবই। না হলে হাতি দেখব।’’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনওটাই দেখা হয়নি তাদের। শেষ পর্যন্ত পার্কের দরজার সামনে সেলফি তুলে তাকে ভোলাতে হয়।

পরিবার ৩: দার্জিলিং

অষ্টম শ্রেণির হৃদম বারা গুরুং দার্জিলিং থেকে তার তুতো ভাইবোনেদের সঙ্গে পরিবারের বড়দের নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সাফারি পার্কের সামনে। সব মিলিয়ে প্রায় জনা পঁচিশের পরিবার। কিন্তু কীসের সাফারি! সাতসকালেই পার্কের সামনে ভিড়। টিকিট বিক্রি বন্ধ। হৃদম তার বোন রিপজং লেপচা এবং সাইলিকা চামলিংদের জিজ্ঞাসা করে, ‘‘এ বার কী হবে? তোকে আগেই বলেছিলাম, ভাল করে খোঁজ নিতে।’’ রিপজং এবং সাইলিকাদের পাল্টা জবাব, ‘‘বছরের প্রথম দিন বন্ধ থাকবে, কে ভেবেছিল।’’ তখন আসরে নামেন দলের কর্তা রাজু প্রধান। তাঁদের প্রস্তাব দেন, ‘‘শোনো, এতদূর থেকে এসে দিনটি নষ্ট করলে তো ঠিক চলে না। চলো, আমরা গেটের উল্টো দিকের মাঠেই পিকনিক শুরু করি।’’ তিন ভাইবোন একসঙ্গে চেঁচিয়ে ওঠে, ‘‘ঠিক ঠিক।’’ তার পর মাঠেই চাদর পেতে নিজেদের মতো দিনটি উপভোগ করতে শুরু করেন তাঁরা।

পরিবার ৪: চম্পাসারি

পঞ্চম শ্রেণির রক্ষা উপাধ্যায় বলছিল, ‘‘কত আগে থেকে আমি ভেবে রেখেছিলাম। সব মাটি হয়ে গেল!’’ সাফারি পার্কের একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে তখন বাবা তুলসীরাম এবং মা চিত্রার দিকে তাকিয়ে ওই ছাত্রী। তুলসীবাবু: ‘‘এরকম হবে কে জানত!’’ চিত্রাদেবী: ‘‘কেন যে ওরা ঠিক মতো নজর রাখে না, বুঝি না। প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। আর কতক্ষণ এ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকব?’’

তুলসীবাবু: বলেন, ‘‘আর একটু দেখি। পার্ক না খুললে চলেই যেতে হবে। তা ছাড়া উপায় কী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন