হাসিমারায় গাড়ি দাঁড়াতে মানা

শুধু ওই একটি ঘটনা নয়, বায়ুসেনা বলছে, গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ২১টি দুর্ঘটনা হয়েছে হাসিমারা বিমানঘাঁটির কাছে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও নারায়ণ দে

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৩
Share:

রেড রোডে কুচকাওয়াজের মহড়ায় এসে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছিলেন বায়ুসেনার কর্পোরাল অভিমন্যু গৌড়। একই ভাবে অনেকটা হাসিমারায় ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার পথে বেপরোয়া ট্রাক পিষে দিল দেবেন্দ্র সিংহ নামে আর এক বায়ুসেনার আর এক কর্পোরালকে। খাস মহানগরে অভিমন্যুর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছিল প্রাক্তন বিধায়ক মহম্মদ সোহরাবের ছেলের সাম্বিয়াকে। প্রত্যন্ত হাসিমারায় দেবেন্দ্রকে পিষে দেওয়া ট্রাক বা তার চালকের কোনও হদিসই পায়নি পুলিশ!

Advertisement

শুধু ওই একটি ঘটনা নয়, বায়ুসেনা বলছে, গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ২১টি দুর্ঘটনা হয়েছে হাসিমারা বিমানঘাঁটির কাছে। যার পিছনে ওই এলাকায় বেআইনি ট্রাক পার্কিংকেই দায়ী করছেন তাঁরা। অবশেষে ওই এলাকাকে ‘নো পার্কিং জোন’ বলে ঘোষণা করল প্রশাসন। সেখানে পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম জানান, গাড়ি দাঁড়ানোর জন্য বিকল্প পার্কিংয়ের জায়গা খোঁজা হচ্ছে।

তবে এলাকার বাসিন্দারা জানান, এলাকাটি নো পার্কিং জোন ঘোষণা হওয়ার পরেও আইন অমান্য করে সেখানে রোজই দাঁড়াচ্ছে ট্রাক। এলাকার ব্যবসায়ী কৃষ্ণ ছেত্রী জানান, এখানে বহু দোকানদারের ব্যবসা নির্ভর করে ট্রাকের চালকদের উপর। কেউ চায়ের দোকান, কেউ হোটেল কেউ মোটর পার্টসের দোকান চালান। সে কারণেই ট্রাকগুলোও এখানে দাঁড়ায়।

Advertisement

এই গাড়ির ভিড়ে ওই এলাকায় আগেও দুর্ঘটনা হয়েছে। দেবেন্দ্রর আগে ২০১৬ সালেও ওই ঘাঁটির কাছে আরও এক বায়ুসেনা কর্মীকে ট্রাকে পিষে দিয়েছিল।

হাসিমারা বায়ুসেনা ঘাঁটির কম্যান্ডিং অফিসার এয়ার কমোডর জে এস মান এই লাগাতার দুর্ঘটনা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তিনি বলছেন, ‘‘২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম রাজ্য সরকারকে লিখেছিলাম। গত ২৩ ডিসেম্বর দেবেন্দ্রর মৃত্যুর পরে ফের জেলাশাসক এবং অন্যান্য কর্তাদের চিঠি দিয়েছি। এই রাস্তা কার্যত মৃত্যু ফাঁদ হয়ে রয়েছে।’’ তাঁর চিঠির পরেই এলাকাটি নো পার্কিং জোনে পরিবর্তন করা হয়।

সেনা সূত্রের খবর, ওই এলাকার ১৬ একর জমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক রাজ্যের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে এবং তা ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটিকে জনস্বার্থে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গাতেই এই বেআইনি পার্কিং তৈরি করা হয়েছে। এ কথা শুনে অনেকেই বলছেন, রাজ্য ঘটা করে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্প চালু করেছে। কিন্তু হাসিমারার এই এলাকায় তা হলে কি তার প্রচার হয় না? প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনেকে এ-ও বলছেন, পূর্ব সীমান্তে চিনের বিপদের কথা মাথায় রেখে বায়ুসেনা ঘাঁটিগুলিকে ঢেলে সাজা হচ্ছে। ফলে তার গুরুত্ব ও নিরাপত্তা আগের থেকে আরও বেড়ে গিয়েছে। হাসিমারা পূর্ব ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি বলেই পরিচিত। তাই এই ঘাঁটির অদূরে ট্রাক পার্কিং তৈরি করা নিরাপত্তার দিক থেকেও বিপজ্জনক। ‘‘পঠানকোটের ঘটনার পর বায়ুসেনা ঘাঁটিগুলির নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের উচিত জাতীয় স্বার্থে পার্কিং সরিয়ে নেওয়া,’’ বলছেন এক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন