সেবিকা: সুভদ্রা সিংহ। নিজস্ব চিত্র
কখনও নিজের খেয়ালে গাইছেন। কখনও আবার শ্রোতাদের অনুরোধে। কোচবিহারের চকচকার কোভিড হাসপাতাল মজেছে ‘গানদিদি’র সুরে। যিনি কখনও হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে সুর তুলছেন, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়...’। কখনও, ‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখব ছেড়ে দেব না...’।
গায়িকার নাম সুভদ্রা সিংহ। তবে মোটেও পেশাদার নন। পেশায় তিনি ওই হাসপাতালের নার্স। শ্রোতারা সবাই হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রোগী। তিনি যে বিভাগেই রোগীদের দেখভালের জন্য যাচ্ছেন, সেখানেই রোগীরা পছন্দের গান শোনাবার আবদার করছেন। হাসিমুখে ওই আবদার সামলাচ্ছেন তিনি। যে গানের সুরে রোগীরা কেউ সুর মেলাচ্ছেন, কেউ আবার গানের ছন্দের হাততালি দিচ্ছেন। সুভদ্রার এমন গানের ভিডিয়ো ভাইরালও হয়েছে। রোগীদের কাছে ‘গানদিদি’ বলেও এখন তাঁর পরিচিতি। হাসপাতাল কর্মী, স্বাস্থ্য, প্রশাসনের কর্তারাও সুভদ্রার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
কোচবিহার শহরেই বাপের বাড়ি সুভদ্রার। বিবাহসূত্রে মাথাভাঙায় থাকেন। মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে কর্মরত। সাময়িক ভাবে কোচবিহারের চকচকার কোভিড হাসপাতালে নার্সের দায়িত্বে। গত ১৬ জুলাই সেখানে কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে রোগীদের অনেকের উৎকণ্ঠা, বিষন্নতা নাড়া দেয় তাঁকে। তাঁদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা করতে নিজের মতো করে কিছু করার ভাবনা তখন থেকেই মাথায় ঘুরছিল। সুভদ্রা বলেন, “প্রথমে পরিবেশ বুঝতে সময় লেগেছে। তারপর নিজেই একদিন গান গেয়েছিলাম। সিসিইউয়ে ওই গান শোনাবার পর অনেকেই হাততালি দেন। আরও একটি গানে্র আবদারও আসে। সেটাই শুরু। তারপর থেকে রোজ যে ওয়ার্ডেই যাচ্ছি, সেখানেই অন্তত একটি করে গান শোনাতে চেষ্টা করি। তাতে দিনে ৫-৬টা গান গাইতে হচ্ছে।” তাঁর সংযোজন, ‘‘হাসপাতালে ভর্তির পর অনেকের মন খারাপ থাকে সেটা কাটাতে চেষ্টা করছি। গান শুনে অনেকেই বলছেন ভয় ভীতিটা কেটে গিয়েছে। যা শুনে ভীষণ ভাল লাগে।’’
আজ, রবিবার পর্যন্ত চকচকার হাসপাতালে তাঁর ডিউটি। বাড়িতে স্বামী, বৃদ্ধা শাশুড়ি, তিন বছরের ছেলে। তিনি বলেন, “ছেলেও গাইতে চেষ্টা করে। ছেলেকে খানিকটা মিস করলেও দায়িত্বপালনই আমার লক্ষ্য।” জেলাশাসক পবন কাদিয়ান তাঁর গানের ভিডিয়ো একটি হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট করে লিখেছেন, “জেলার কোভিড হাসপাতালের ছোট্ট ভিডিয়ো। ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করে আমাদের জিততে হবে।” কোচবিহারের ডেপুটি সিএমওএইচ-১ বিশ্বজিৎ রায় বলেন, “উনি ভাল গান করেন। আন্তরিক চেষ্টা করছেন।’’