কেউ যেন কথাই শুনছে না

তবে সকাল সকাল মাঠে নেমেছিল পুলিশ-প্রশাসনের বাহিনীও। তাঁদের দিকেও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “সবই তো খোলা, শুধু মানুষ তাড়িয়ে কি সমাধান হবে?”

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ 

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০ ০৪:৫২
Share:

প্রতীকী ছবি।

কে শোনে কার কথা! লকডাউন চললেও সেই সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশ যেন অনেকেই মানতে নারাজ। তাই শুক্রবার সকাল থেকে অন্তত দুপুর পর্যন্ত দৃশ্যত লকডাউন নেই বলেও মনে হল কোচবিহার শহরের রাস্তাঘাটে ঘুরে। বাস চলছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে অটো-টোটো। সকালের দিকে বাজারে বাজারে উপচে পড়েছে ভিড়। দুপুরের দিকে অবশ্য ভিড় খানিকটা থিতিয়ে যায়।

Advertisement

তবে সকাল সকাল মাঠে নেমেছিল পুলিশ-প্রশাসনের বাহিনীও। তাঁদের দিকেও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “সবই তো খোলা, শুধু মানুষ তাড়িয়ে কি সমাধান হবে?” তাঁদের প্রশ্নে থমকে গিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারাও। তাঁদেরও এক কর্তার কথায়, “এ ভাবে পুরোপুরি লকডাউন অসম্ভব।” তার পরেও দুপুরের পর থেকে লাঠি হাতে দৌড়ে বেড়িয়েছেন তাঁরা। সন্ধ্যের পর থেকে তো ‘দেখলেই লাঠি মারো’ আওয়াজে শহরে ঘুরে বেড়িয়েছে পুলিশ। কোচবিহাহার সদর মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল বলেন, “লকডাউনে যাতে সবাই আইন মেনেই বাইরে বের হন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

ঠিক কেমন ছিল পূর্ণ লকডাউনের তৃতীয় দিনের কোচবিহার শহর? বাসিন্দারাই জানান, সকাল থেকে ভবানীগঞ্জ বাজার থেকে শুরু করে নতুনবাজার, রেলগেট বাজার, জামাইবাজার এবং শহরের আরও একাধিক বাজারে বসেছিল মাছ-মাংস ও আনাজের দোকান। একাধিক বাজারে ছোট-বড় অন্য সামগ্রীর দোকানও খুলে দেওয়া হয়। বাজারের বিক্রেতা ও গ্রাহকদের অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক। প্রকাশ্যেই চলতে থাকে সুখটান। প্রায় একই অবস্থা ছিল রাস্তায়। সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল অনেকটাই। টোটো-অটো চলছিল। ব্যাঙ্ক ও চিকিৎসা কেন্দ্রের সামনেও ছিল লম্বা লাইন। পুলিশ বাজারে ঢুকলে অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। মহকুমাশাসক নিজেই লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে পড়েন। বাস ও গাড়ি শহর থেকে বের করার নির্দেশ দেন তিনি। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করার নির্দেশও দেন। লাঠি নিয়ে তেড়েও যান পুলিশ, প্রশাসনের কর্তারা। হ্যান্ডমাইক হাতে ঘুরে বেড়ান কোতোয়ালি থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায়। রাস্তায় দেখা যায় ট্রাফিক ডিএসপি চন্দন দাসকেও।

Advertisement

করোনার প্রকোপ শুরু হতেই যে লকডাউন কোচবিহার দেখেছিল, সে রকম এ বারে হচ্ছে না— এমনটা শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নন, বলছেন প্রশাসনেরও কেউ কেউ। এ বারের লকডাউনে শুধু কোচবিহার শহরকে রাখা হয়েছে। সেখানে জরুরি পরিষেবা বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উপরে ছাড় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শহরে ব্যাঙ্ক বা চিকিৎসা কেন্দ্র, ওষুধের দোকান থেকে বেশ কিছু সরকারি অফিস খোলা থাকছে। সকাল ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকছে আনাজ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার। এর বাইরে কোচবিহার শহরেই সরকারি ও বেসরকারি বাসের ডিপো। সেই বাস জেলার বিভিন্ন প্রান্ত এবং পাশের জেলাতেও যাতায়াত করছে। সে সব বন্ধ করলে গোটা জেলায় তার প্রভাব পড়বে, বলছেন প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, তাই পুলিশ-প্রশাসনকেও হিসেব কষে পা ফেলতে হচ্ছে।

স্বাভাবিক ভাবেই ব্যবসায়ীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, “তা হলে শুধু কি কিছু দোকানপাট বন্ধ করে লকডাউন হয়?” কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক চাঁদমোহন সাহা বলেন, “আমাদের ব্যবসায়ীদের অবস্থা সবথেকে খারাপ। দীর্ঘসময় ধরে দোকান বন্ধ থাকার পর যখন আশার আলো দেখছিলাম, তখন আবার সব বন্ধ রাখতে হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন