Aadhar Card

দু’রাত জেগে ব্যাঙ্কের সামনে

শনি ও রবিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ। ফলে ব্যাঙ্কে চালু হওয়া আধার এনরোলমেন্ট সেন্টারে দু’দিন আধার সংশোধনও বন্ধ।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৫৯
Share:

হয়রানি: আধারের লাইনে গিয়াস শেখ। নিজস্ব চিত্র

শনি ও রবিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ। ফলে ব্যাঙ্কে চালু হওয়া আধার এনরোলমেন্ট সেন্টারে দু’দিন আধার সংশোধনও বন্ধ। সোমবার ব্যাঙ্ক খুললে তবেই সংশোধনের পালা। কিন্তু নতুন নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির আতঙ্কে আধার সংশোধন বালাই হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, সোমবার ব্যাঙ্ক খুললে আধার সংশোধন যাতে করতে পারেন সে জন্য শনিবার বিকেল থেকেই ইংরেজবাজার শহরের অতুল মার্কেটে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিঁড়িতে নাতি-নাতনি, বৌমাকে নিয়ে লাইনে বসে রয়েছেন ইংরেজবাজার ব্লকের লক্ষ্মীঘাট বালুপুরের বাসিন্দা ফিরোজা বিবি। দিনমজুরি করে সংসার চলে। তাই দু’রাত তিনবেলা পরিবারের সকলে মিলে হোটেলে খাওয়ার জো নেই। তাই লাইনে দাঁড়িয়ে খাওয়া সারার জন্য সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ছাতু, চিঁড়ে ও মুড়ি। সে সবই জলে গুলে সকলে মিলে দিন রাতের আহার সারছেন।
শুধু ফিরোজার পরিবারই নয়, একই গ্রামের ৭৫ বছরের বৃদ্ধ গিয়াস শেখও শনিবার বিকেল থেকে ব্যাঙ্কের সামনে সিঁড়িতে লাইনে বসে আছেন। তাঁরও খাবার বাড়ি থেকে আনা ছাতু, মুড়ি। এই শীতে ভরসা একটা গায়ের চাদর। কিন্তু খোলা সিঁড়িতে রাতে যখন হুহু করে হাওয়া ঢুকছিল তখন ঠান্ডায় রীতিমতো কাঁপছিলেন তিনি। জানালেন পাশেই বসে থাকা ফিরোজা, রেশমি বিবিরা।
আবার, লেখাপড়ার পাট শিকেয় তুলে আধার সংশোধনের জন্য শনিবার বিকেল থেকেই ব্যাঙ্কের সিঁড়িতে লাইন আঁকড়ে বসে রয়েছে এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মালদহের কোকলামারি হাই স্কুলের ছাত্র মহম্মদ ফুল। একই সঙ্গে বসে মহদিপুর হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির আর এক ছাত্র জাহেদ শেখ।
ফিরোজা বললেন, ‘‘নতুন নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি নিয়ে যে দিন থেকে কথাবার্তা চলছে সে দিন থেকেই আমরা আতঙ্কিত। এই দেশে থাকতে পারব কিনা তা ভেবে কূল পাচ্ছি না। তাই আধার, ভোটার কার্ড সব ঠিকঠাক করে রাখছি যাতে অন্তত দেশে থাকতে পারি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই ব্যাঙ্কে আধার এনরোলমেন্ট সেন্টারে প্রতিদিন মাত্র ১৭টি করে আধার সংশোধন করা হয়। কিন্তু লাইনে হয় অন্তত ১০০ জনের। এর আগে দু’বার লাইনে দাঁড়িয়ে ফিরে গিয়েছি। তাই এ বার আর ঝুঁকি নিতে চাইনি। শনি, রবি দুই দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ। লাইনের শুরুতে থাকতে তাই শনিবার বিকেলেই বৌমা, ছোট ছোট নাতি-নাতনিদের সঙ্গে করে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছি। এই শীতে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে রাত কাটাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিছু করার নেই।’’
গিয়াস বলেন, ‘‘যখন আধার কার্ড করেছিলাম তখন সব ঠিকঠাক নথি জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু তার পরেও বাবার নাম ভুল এসেছিল। এত দিন গা করিনি। কিন্তু এখন এনআরসির আতঙ্কে, ভুল সংশোধন করতে গিয়ে এত কষ্ট পোহাতে হচ্ছে, বলার নয়। গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে ব্যাঙ্কের সিঁড়িতে বসে কী ভাবে যে রাত কাটাচ্ছি শুধু আমিই জানি।’’ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ফুল মহম্মদ বলেন, ‘‘আধারে বাবার নাম ভুল, জন্ম তারিখ লেখা নেই। সংশোধন করাতে মাধ্যমিকের পড়া বাদ দিয়ে এ ভাবে রাত জেগে লাইনে থাকতে হচ্ছে।’’
ভুক্তভোগীদের এই পরিস্থিতি শুনে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা জেলায় আধার এনরোলমেন্ট সেন্টারের সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছি। এ ছাড়া কিছু করার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন