সংরক্ষণ হোক কোচবিহারেই

ঠাকুমাকে লেখা কবির চিঠি আগলাচ্ছেন প্রবীণ

ঠাকুমাকে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি আগলে রেখেছেন কোচবিহারের এক প্রবীণ বাসিন্দা। বছরভর বাড়ির ‘লকারে’ তালাবন্দি করে রাখা হয় ওই সম্পদ। ফি বছর ২৫ বৈশাখ বাইরে অবশ্য তা বের করতেই হয়। সেটাও অবশ্য আগ্রহীদের কৌতূহল মেটাতে।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ০৩:২২
Share:

স্মৃতি: ইন্দিরা রায় (নারায়ণ)-কে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠি। তালাবন্দি করে এই সম্পদ রেখে দিয়েছেন ইন্দিরাদেবীর নাতি আশিস রায়। নিজস্ব চিত্র

ঠাকুমাকে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি আগলে রেখেছেন কোচবিহারের এক প্রবীণ বাসিন্দা। বছরভর বাড়ির ‘লকারে’ তালাবন্দি করে রাখা হয় ওই সম্পদ। ফি বছর ২৫ বৈশাখ বাইরে অবশ্য তা বের করতেই হয়। সেটাও অবশ্য আগ্রহীদের কৌতূহল মেটাতে। নিজেও নেড়েচেড়ে দেখেন ওই স্মৃতি।

Advertisement

কিন্তু সিলভার জুবিলি রোডের বাসিন্দা আশিস রায়ের চিন্তা, এ ভাবে কত দিন ওই চিঠি ঠিকঠাক রাখতে পারবেন? ভবিষ্যতেই বা কী হবে? আশিসবাবু বলেন, “ওই চিঠি ইতিহাসের দলিল। ফলে সে সব কত দিন রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারব, তা নিয়ে চিন্তা তো রয়েইছে।” কয়েক বছর আগে প্রশাসনের তরফে রাজবাড়ি মিউজিয়ামে রবীন্দ্রনাথের চিঠি সংরক্ষণের প্রস্তাব এসেছিল। সুরক্ষার নিশ্চয়তা পেলে তা নিয়ে ভাববেন। বিশ্বভারতীর সংগ্রহশালাতেও দিতে রাজি তিনি। তবে আশিসবাবু চান, এই চিঠির সঙ্গে কোচবিহারের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে বলে তা কোচবিহারেই সংরক্ষণ করা হোক।

আশিসবাবুর ঠাকুমা ইন্দিরা রায় (নারায়ণ) কোচবিহারের প্রথম মহিলা স্নাতক হিসেবে সংবর্ধিত হন। ১৯০২ সালে তাঁর জন্ম। মৃত্যু ১৯৭৮ সালে। স্বামীর নাম পূর্ণানন্দ রায়। যিনি মহারাজার পদস্থ কর্তাদের একজন (এডিসি) ছিলেন। ইতিহাস গবেষকরা জানিয়েছেন, তিরিশের দশকে কোচবিহারের রাজকন্যা গায়ত্রী দেবী, ইলাদেবী শান্তিনিকেতনে বাংলা শেখার জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে তাদের অভিভাবিকা হিসেবে ছিলেন ইন্দিরা রায় (নারায়ণ)। সেই সূত্রেই সঙ্গীত ও চিত্রকলার ছাত্রী হিসেবে রবীন্দ্রনাথের স্নেহের পাত্রী হয়ে উঠেছিলেন ইন্দিরা। পরে কোচবিহারে ফিরে আসার পর তাঁকে একাধিক চিঠি পাঠিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। গবেষক নৃপেন পাল বলেন, “রবীন্দ্রনাথ কখনও কোচবিহারে আসেননি। তবে রাজ পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। মহারানি সুনীতি দেবীর সঙ্গে দার্জিলিংয়ে একাধিকবার কবির সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিরিশের দশকে ইন্দিরাদেবী শান্তিনিকেতনে থাকার সুবাদে তিনিও কবির স্নেহধন্য হন।”

Advertisement

চিঠিতে ইন্দিরা রায়কে (নারায়ণ) কী লিখেছিলেন কবি? ৪ বৈশাখ ১৩৪৩ তারিখের চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘...... গরম পড়েছে বটে। কিন্তু অত্যন্ত বেশি নয়। তবু শরীরটাকে আর একবার একটুখানি তাজা করে নেওয়ার দরকার আছে। হয়তো শিলং যাওয়া হবে। যদি বাড়ি না পাই তা হলে পুরীতে যাবার চেষ্টা করব। তাও যদি না ঘটে ওঠে তা হলে যেখানে আছি সেখানেই থেকে যাব। কিন্তু জ্যৈষ্ঠ মাসে এখানে থাকবার কথা চিন্তা করলে দেহটা শুকিয়ে আসে...’। ২৭ অক্টোবর ১৯৩৬ বিজয়ার আশীর্বাদ জানিয়েও চিঠি দিয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালের ২৪ অক্টোবর ইন্দিরা দেবীর চিঠির প্রত্যুত্তরও দেন রবীন্দ্রনাথ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন