বাড়ি গিয়েছে নদীর গ্রাসে। বীরনগর হাইস্কুলই এখন ঠিকানা শতাধিক বাসিন্দার। — নিজস্ব চিত্র
গত বছরের ২৯ জুলাই এর ঘটনা মনে পড়লে এখনও শিউরে ওঠেন মালদহের কালিয়াচক ৩ ব্লকের সরকারটোলার বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল। সে দিন রাতে গঙ্গার ভাঙন কেড়ে নিয়েছিল তাঁর বসতবাড়ি। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত তাঁর ঠিকানা বীরনগর হাইস্কুলের ইউনিট-২ এর ভবন। শুধু ইন্দ্রজিৎ মণ্ডলই নন, ওই স্কুল ভবনে এখনও রয়েছেন ভাঙনে ঘরহারা বেশ কিছু পরিবার।
ঘটনার দিন রাতে কালিয়াচক ৩ ব্লকের সরকারটোলায় ভেঙে গিয়েছিল প্রায় পাঁচশো মিটার বাঁধ। গঙ্গার ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছিল ১২৬টি বাড়ি। তারপর বেশ কয়েকবারের ভাঙন হয়েছে রবিদাসপাড়া, মুকুন্দটোলা এলাকায়। সব মিলিয়ে প্রায় ২৪৭টি পরিবার বাড়ি হারিয়েছে। এছাড়াও ভাঙনের আশঙ্কায় আরও প্রায় ২০০ পরিবার তাঁদের বাড়ি ভেঙে আসবাব ও অন্য জিনিস সরিয়ে নেয়। তাঁরা এখনও নতুন করে বাড়ি তৈরি করতে পারেনি।
ভাঙনের পর প্রায় ছ’মাস কেটে গেলেও বাড়ি হারানো ২৪৭টি পরিবারের মধ্যে মাত্র ৮০টি পরিবারের পুনর্বাসন দিতে পেরেছে প্রশাসন। একশো পরিবার আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন চালু না হওয়া বীরনগর হাই স্কুলের ইউনিট ২-এর ভবনে। ভাঙন দুর্গতদের বাকিরা কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন, কেউ অন্নের সংস্থানে সপরিবারে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। বিড়ি বেঁধে বা দিনমজুরি করে কোনওরকমে বেঁচে আছেন অনেকে। ২৯ জুলাইয়ের ওই ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছিল বৈষ্ণবনগরের বিজেপি বিধায়ক স্বাধীন সরকারের বাড়িও। তারপর থেকে খোদ বিধায়কই বাড়ি ছাড়া। এখনও তিনি রয়েছেন চামাগ্রামে এক বন্ধুর বাড়িতে।
সকলের পুনর্বাসন না হওয়ায় ভাঙন পীড়িতদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তাঁদেরই একজন ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘কিছুই পায়নি। ইন্দিরা আবাসের ফর্ম পূরণ করে নিয়ে গিয়েছে প্রশাসনের লোকজন। কিন্তু কোনও কিছু হয়নি।’’ বীরনগর স্কুলেই আশ্রয়ে নিয়ে থাকা শীতলী মণ্ডল জানান, একটি ত্রিপল আর কিছুদিনের খাবার ছাড়া পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণ কিছুই পাননি। আরও এক ভাঙন পীড়িত প্রতিমা মণ্ডল অবশ্য চরিঅনন্তপুরে প্রশাসনের তরফ থেকে দুই শতক জমির পাট্টা পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি তৈরির টাকা নেই। তাই এখানেই পড়ে থাকতে হচ্ছে।’’
দুর্গতদের অসহায় অবস্থার কথা মেনে নিয়েছেন বীরনগর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ডলি মণ্ডলও। তিনি বলেন, ‘‘সব পরিবারের নাম ইন্দিরা আবাস যোজনায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছি। কিন্তু ৬ মাস কাটতে চললেও কোনও খবর নেই।’’ চরিঅনন্তপুরে যে ৮০টি পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়েছে সেখানে ৭৫টি পরিবার গিয়েছে বলে জানান প্রধান। ওই পরিবারগুলিও সেখানে কোনওমতে একটি আস্তানা করে রয়েছে। বিধায়ক স্বাধীন সরকার বলেন, ‘‘সকলের পুনর্বাসনের জন্য প্রশাসনের কাছে বারবার দাবি জানিয়েছি।’’ ভেঙে যাওয়া অংশে বাঁধ তৈরির জন্য ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দাবি জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। জমির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, তাই পুনর্বাসন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) দেবতোষ মণ্ডলের। তিনি বলেন, ‘‘জমির খোঁজ চলছে। পেলে বাকিদের পুনর্বাসন হবে।’’