সব সমস্যা ভুলে সকাল থেকে পঞ্জির জন্য ছুট 

Advertisement

মেহেদি হেদায়েতুল্লা

করণদিঘি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:৫৪
Share:

আতঙ্ক: বিধায়ককে পঞ্জি নিয়ে উদ্বেগের কথা বলতে ভিড়। নিজস্ব চিত্র

এলাকার সমস্যা নয়, ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে উঠে এল নাগরিক আতঙ্ক। নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আরও উৎকণ্ঠা বেড়েছে নাগরিকদের। সোমবার সেই ছবি ফুটে এল উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির তেংলাডাঙ্গি গ্রামে। এ দিন করণদিঘির তৃণমূলের বিধায়ক মনোদেব সিংহের নেতৃত্বে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি ছিল। ছিলেন বিধায়ক সহ অন্য নেতৃত্বরা।

Advertisement

এই গ্রামে যেতে হলে পাকা সড়ক নেই। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। স্বাস্থ্য পরিষেবা বেহাল। কৃষকদের জন্য সেচের ব্যবস্থা নেই। এই প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা কেউ কেউ ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। অধিকাংশ বাসিন্দা দিনমজুরি। আশপাশে স্কুল না থাকায় স্থানীয়রা জমি দান করেছিলেন। কিন্ত এখনও স্কুল হয়নি।

কিন্তু গ্রামের সমস্যাগুলো নিয়ে এলাকার মানুষ যতটা না চিন্তিত, তার থেকে বেশি চিন্তিত নাগরিক অধিকার নিয়ে। গ্রামের এই ছাপোষা মানুষগুলো নাগরিক পঞ্জি নিয়ে রীতিমতো দিশেহারা তারই প্রমাণ মিলল ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে বিধায়ককে পেয়ে গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা ভুলে ভরা নথি নিয়ে হাজির। যেমন ওই গ্রামের বধূ সবিতা বর্মণ। তাঁর স্কুলের নথিতেও ‘সবিতারানী বর্মণ’ রয়েছে। ভোটার কার্ডে নাম রয়েছে ‘সবিতা বর্মণ’। বিয়ের পর পদবী পরিবর্তন করে বর্মণের জায়গায় সিংহ হয়েছে। আধার কার্ড রয়েছে সবিতা সিংহ। অর্থাৎ, তিনটি নথিতে তিন রকম নাম। তা হলে এখন কী হবে?

Advertisement

এই নিয়ে যখন সমস্যার কথা বিধায়ক শুনছেন ঠিক সময়েই আরও গ্রামের এক ব্যক্তি হাজির জমির নথি নিয়ে। হাতে পুরানো নথি নিয়ে মহম্মদ হালিমুদ্দিন জানাচ্ছেন, হালিমুদ্দিনের বাবার জমির নথিতে কাগজে নাম রহমান সেখ। কিন্ত তাঁর ভোটার কার্ডে বাবার নাম রয়েছে শুধু রহমান আলি।

এই রকম বহু ব্যক্তি নাম বিভ্রান্তে আতঙ্কিত। বিধায়কের কাছে হাজির হয়ে তাঁরা সমস্যাগুলো জানালেন। খুঁজলেন সমাধানের রাস্তা। কেউ জানালেন, পুরানো নথি নেই অনেকের কাছে। কিভাবে উদ্ধার করবেন জানেন না। সকাল থেকেই তাঁরা নানা জায়গায় ছুটছেন নথি ঠিক করতে।

দোমহনা গ্রাম পঞ্চায়েতরে তেংলাডাঙ্গি গ্রামে সব মিলিয়ে ৩০০ পরিবার। বেশিরভাগ রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। ২৫টি মুসলিম পরিবার। দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন এক সঙ্গে বাস করেন। সবাই এক সঙ্গে থেকে এলাকার বিপদ আপদে পাশে থাকেন। কিন্ত এই গ্রামে আঁচ পড়েছে আতঙ্ক। আতঙ্ক ভিটে ছাড়ার। আর সেই ছবি ধরা পড়ল এ দিন।

অনেকে নালিশ জানালেন, করণদিঘিতে আধার সেন্টার না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয় বাসিন্দাদের। এতে হয়রানি মুখে পড়তে হয়। কাজকর্ম ফেলে নথি জোগাড়ের জন্য ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা আজাদ আলি ও কার্তিকচন্দ্র সিংহ বলেন, নতুন নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিক পঞ্জি নিয়ে সকলেই চিন্তিত। অনেকের কাছে পুরানো নথি নেই। নাম সংশোধন করার ক্ষেত্রে নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। করণদিঘিতে আধার সেন্টারের দাবি ব্লক প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে।

বিধায়ক মনোদেব সিংহ বলেন, ‘‘দিদিকে বলো কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে দেখা গেল গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ নথি নিয়ে চিন্তিত। অনেকের নাম বিভ্রাট রয়েছে। অনেকের কাছে পুরানো নথি নেই। ফলে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছি, আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই।’’ তাঁর বক্তব্য, নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, এই রাজ্য এনআরসি লাগু হবে না। তাই চিন্তা করার দরকার নেই। করণদিঘিতে একটি আধার সেন্টার চালু করার বিষয়ে প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে বলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন