পরীক্ষা: আলিপুরদুয়ারে ডিম পরীক্ষায় কাউন্সিলর। নিজস্ব চিত্র
কোথাও আতঙ্ক, কোথাও আগাম সতর্কতা, কোথাও বা আবার সরাসরি অভিযান। প্লাসটিকের ডিম ঘিরে উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় মোটের উপর ছবিটা ছিল এমনই।
দু’দিন আগে বালুরঘাটের তহবাজার থেকে ডিম কিনে ছিলেন উত্তর চকভবানির ছোট ব্যবসায়ী দিলীপ ঘোষ। তাঁর গৃহিনী অমলেট বানানোর জন্য ডিমগুলি ভাঙতেই ছড়িয়ে যায় তা। পচা বলে সন্দেহ করে ডিমগুলি ফেলে দেন তারা। শনিবার কলকাতায় প্লাস্টিকের ডিম ধড়পাকড়ের খবর জেনে দিলীপবাবু নিশ্চিত, ওই ডিমগুলি ছিল প্লাস্টিকেরই।
প্লাস্টিকের ভেজাল ডিমের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ডুয়ার্সের শামুকতলা, কুমারগ্রাম, কামাখ্যাগুড়ি, বারবিশায়। অনেকেই দিনের মেনু থেকে ডিম বাদ দিয়েছেন। শামুকতলার দক্ষিণ মহাকাল গুড়ি গ্রামের দিয়া পন্ডিত নামে এক বধূ জানালেন, প্রতিদিন বাড়ির ছোটোদের খাবারের তালিকায় ডিম থাকলেও এখন আতঙ্কেই ডিম দেওয়া বন্ধ করেছেন।
ভেজাল ডিম বিক্রি নিয়ে এখনও পর্যন্ত রায়গঞ্জের কোনও বাজারে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। শহরের মোহনবাটী, এফসিআই ও লাইন বাজারের ডিম ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, তাঁরা এখনও পর্যন্ত ভেজাল ডিম দেখেননি। টিভি, সংবাদপত্র ও ফেসবুকে ভেজাল ডিম সম্পর্কে জেনেছেন। তবে আতঙ্কে বাসিন্দারা আগের মতো পোলট্রির ডিম কিনছেন না। ফলে ডিমের বিক্রি কমে গিয়েছে।
ভেজাল ডিম উদ্ধার না হলেও মালদহ জেলা জুড়েও ডিম কেনাবেচা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এমন কী হোটেলে রান্না করা ডিম বিক্রিও কমে গিয়েছে। ইংরেজবাজার শহরের এক হোটেল মালিক দীননাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘দৈনিক একশো পিস করে ডিমের ঝোল করতাম। গত দু’দিন ধরে ডিম ভাত অনেকে খেতে চাইছেন না। অর্ধেকের বেশি ডিম বিক্রি করতে পারিনি।’’ যদিও মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অফ কর্মাসের সভাপতি জয়ন্ত কুন্ডু বলেন, ‘‘প্লাসটিকের ডিম বিক্রির কোনও ঘটনা আমাদের নজরে আসেনি।’’
প্রশাসনও জানিয়েছে, উদ্বেগের কোনও ব্যাপার নেই। নজর রাখা হচ্ছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “কোচবিহারে এখনও ও রকম অভিযোগ নেই। বিষয়টির উপর নজর রাখা হচ্ছে।” কয়েকজন ডিম ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, জেলায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হাঁস, মুরগির ডিমের চাহিদাও ভাল। তবে জোগান কম। দাম বেশি। তাই পোলট্রির ডিমের বিক্রিও বেশি। তাঁরা বলেন,‘‘বাইরে থেকে ওই ডিম আনা হয়। তাই কিছুটা উদ্বেগ আমাদেরও হচ্ছে। অন্যের কোন ভুলের জন্য যাতে সমস্যা না হয় সেটা দেখতে হবে।
ফোসিনের সদস্য তথা দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, “জেলায় এখনও প্লাস্টিকের ডিম বিক্রির কোনও ঘটনা নজরে আসেনি। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতা সহজেই যাতে প্লাস্টিকের ডিম চিনতে পারেন তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। সাংগঠনিকভাবে উদ্যোগ নিচ্ছি।”
শনিবার আলিপুরদুয়ার শহরের বড়বাজার এলাকা ঘুরে দেখেন পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা কাউন্সিলর দীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। এ দিন বড়বাজারের ডিমের আড়তে গিয়ে বেশ কয়েকটি ডিম ভেঙে পরীক্ষা করেন তিনি। দীপ্তবাবু বলেন, “জেনেছি নকল ডিম হলে তাতে প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ থাকবে। কুসুম বা সাদা অংশ সহজে পড়বে না। তবে সে ধরনের জিনিস পাইনি। ডিম বিক্রেতাদের বিষয়টি নজরে রাখতে বলেছি।’’