রেডিমেড নাড়ুতেও পুড়ছে হাত

হে জাতবেদ অগ্নি, তুমি আমার জন্য হিরণ্যবর্ণা, হরিতকান্তি, অথবা হরিণীরূপধারিণী, সুবর্ণ রজতের পুষ্পমালা ধারিণী চন্দ্রবৎপ্রকাশমানা হিরন্ময়ী লক্ষ্মীকে আহ্বান কর। জাতবেদ শ্রীকে আহ্বান কর, যিনি আহূত হইলে আমি সুবর্ণ গো অশ্ব এবং বহু লোকজন পাইব। যে দেবীর সম্মুখে অশ্ব, মধ্যে রথ, হস্তিনাদের দ্বারা যাঁহার বার্তা স্থাপিত হয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩০
Share:

এসো মা লক্ষ্মী। শুক্রবার জলপাইগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

হে জাতবেদ অগ্নি, তুমি আমার জন্য হিরণ্যবর্ণা, হরিতকান্তি, অথবা হরিণীরূপধারিণী, সুবর্ণ রজতের পুষ্পমালা ধারিণী চন্দ্রবৎপ্রকাশমানা হিরন্ময়ী লক্ষ্মীকে আহ্বান কর। জাতবেদ শ্রীকে আহ্বান কর, যিনি আহূত হইলে আমি সুবর্ণ গো অশ্ব এবং বহু লোকজন পাইব। যে দেবীর সম্মুখে অশ্ব, মধ্যে রথ, হস্তিনাদের দ্বারা যাঁহার বার্তা স্থাপিত হয়।

Advertisement

শ্রীসুক্তের এই দেবীই লক্ষ্মী বলে উল্লেখ করা হয়। কোজাগরী পূর্ণিমায় তাঁর পুজোর মুখে কিন্তু মাথায় হাত মধ্যবিত্তের।

ছোট পদ্মের কুঁড়ি ১০ টাকা, একটু বড় হলেই ২০ টাকা। ধানের ছড়া ৫ টাকা, কোথাও ১০ টাকা। কলা গাছের খোলা দিয়ে তৈরি নৌকা ৩০-৪০ টাকা। শুক্রবার সকালে শিলিগুড়ির কয়েকটি বাজারে পানিফল ছিল প্রতি কিলোগ্রাম ১২০ টাকা। বেলা বাড়তেই তা ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে থাকে। ঘটে দিতে ডাবের কুড়ি তাও ২০ টাকা ২৫ টাকা এক একটি। লক্ষ্মীপূজোর বাজার করতে গিয়ে তাই বরাবরের মতো এ বারও চিন্তায় বাসিন্দারা। শিলিগুড়ি, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, রায়গঞ্জ সর্বত্রই লক্ষ্মীপুজোর বাজার করতে গিয়ে হাত পুড়ছে গৃহস্থের।

Advertisement

ফল থেকে শুরু করে সব্জি, সব কিছুর দামই আকাশ ছোঁয়া। শিলিগুড়ির বিধানমার্কেট ফল এবং সব্জি বাজারে, হায়দরপাড়া, সুভাষপল্লি, গেট বাজারের ভিড় করে পুজোর কেনাকাটা করেছেন বাসিন্দারা। চম্পাসারির বাসিন্দা শিখা পাল, সুভাষপল্লির বাসিন্দা কৃষ্ণ মণিরা বলেন, ‘‘দাম বেশি তো সবেরই। তা হলেও উপায় নেই। লক্ষীপূজো তো করতেই হবে। ওই দাম দিয়েই বাজার করতে হচ্ছে। কুড়ি টাকা দিয়ে পদ্মের কুঁড়ি নিতে হয়েছে। ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে শশা কিনতে হচ্ছে। বুঝতেই পারছেন।’’

মালদহের ইংরেজবাজার শহরের বাজারগুলিতে ভিড় ছিল যথেষ্ট। তবে মাটির লক্ষ্মী প্রতিমা থেকে শুরু করে ফল সব কিছুরই দাম ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ চড়া। মাটির ছোট লক্ষ্মী প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে ২০০টাকা দরে। পদ্ম ফুল ১৫ টাকা প্রতিটি। প্রতিটি তালশাঁস দশ টাকা, ডাবের কুড়ি ২০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে রেডিমেড নাড়ুও। রেডিমেড নাড়ু কিনতে গিয়েও হাত পুড়ছে। রেডিমেড নারকেল নাড়ুর ছোট প্যাকেটের দাম ৬০ টাকা, তিলের নাড়ুর ৮০ টাকা, চিড়ে ও মুড়ির নাড়ু ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে শহরের বাজারগুলিতে।

কোচবিহারে বাজার করতে গিয়ে বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, এক সপ্তাহ আগেও সমস্ত কিছুর দাম গড়ে ৩০-৪০ শতাংশ কম ছিল। লক্ষ্মীপুজোর বাজারে আচমকা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মাসুল গুনতে হয় ক্রেতাদের। কৃষ্ণা রাহা বলেন, “ফল থেকে সব্জি, প্রতিমা সব জিনিসের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। মধ্যবিত্তদের পক্ষে পুজোর আয়োজন করা দুষ্কর হয়ে পড়ছে।” ভবানীগঞ্জ বাজারের ফল ব্যবসায়ী রাজু বানোয়ার দাবি, “গত এক সপ্তাহের তুলনায় মুসম্বির দাম সামান্য বেড়েছে। পুজো বলে অন্য ফল সেভাবে বাড়েনি।” তুফানগঞ্জ পাইকারি সব্জি ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তা গৌতম সরকারের কথায়, “লক্ষ্মীপুজোর জন্য বাজারে চাহিদা বেড়ে গিয়েছে বলে কিছু দাম সাময়িক বেড়েছে।”’

রায়গঞ্জের মোহনবাটি, সুদর্শনপুর, উকিলপাড়া, লাইনবাজার, সুভাষগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট থেকে বড় বিভিন্ন আকারের প্রতিমা এক একটি ৩০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরার দাম প্রতিটি অন্তত ৩৫ টাকা। সুভাষগঞ্জ এলাকার প্রতিমা ব্যবসায়ী কালু পালের দাবি, এ বছর প্রতিমার দাম বাড়েনি। প্রতিমার আকৃতি অনুযায়ী গতবারের দামেই বিক্রি হচ্ছে। জলপাইগুড়িতে ছোট লক্ষ্মী প্রতিমা ৭০ থেকে ৩৫০ টাকা ও লক্ষ্মীর সরা ৫০ থেকে ৮০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পদ্মফুল একটির দাম ২০ টাকা, লক্ষ্মীর পাঁচালি প্রতিটি দশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোচবিহারের মৃৎশিল্পী সুজিত পাল আবার জানান, ‘‘গতবার ন্যুনতম ১০০ টাকা প্রতিমা আমরাও বিক্রি করেছি। এবার সব উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন