নদী বাঁচাতে ‘লোকসভা’

বিহারের খাগরিয়ার বাসিন্দা প্রবীণ সাংবাদিক তথা পরিবেশকর্মী চন্দ্রশেখরমের কথায়, ‘‘একদা ‘বিহারের দুঃখ’ ছিল কোশী নদী। আজ নাব্যতা হারিয়ে কোশী নিজেই ‘দুখী’ নদীতে পরিণত হয়েছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৮ ০২:৫০
Share:

দাবি: নদী নিয়ে দেশজোড়া আন্দোলনের ডাক বালুরঘাটে। নিজস্ব চিত্র

আত্রেয়ীকে সামনে রেখে বালুরঘাট থেকে দেশের নদী রক্ষার আন্দোলনের ডাক দিলেন পরিবেশ কর্মী বিভিন্ন রাজ্যের নাগরিকেরা। ‘নদীসভা’ থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে নিয়ে ‘নদী লোকসভা’ গড়ে দেশ জুড়ে আন্দোলনের এক নয়া মডেলের সম্ভাবনার কথা উঠে এল এ দিনের কনভেনশনে। রাজ্যের নদী বিশেষজ্ঞ থেকে মহারাষ্ট, বিহার, কটকের সমাজ ও পরিবেশকর্মীরা তুলে ধরলেন নিজ রাজ্যের নদীগুলোর নাব্যতা হারানোয় সমাজ জীবনে বিরূপ প্রভাবের কথা।

Advertisement

বিহারের খাগরিয়ার বাসিন্দা প্রবীণ সাংবাদিক তথা পরিবেশকর্মী চন্দ্রশেখরমের কথায়, ‘‘একদা ‘বিহারের দুঃখ’ ছিল কোশী নদী। আজ নাব্যতা হারিয়ে কোশী নিজেই ‘দুখী’ নদীতে পরিণত হয়েছে।’’ বাগমতী, কোশি, বুড়িগঙ্গা, গঙ্গা—তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে প্রবাহিত ওই চারটি নদীকে তিনি ছোটবলা থেকে দেখে আসছেন। তিনি জানান, চলতি গ্রীষ্মে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বাগমতী নদীর উপর দিয়ে মানুষ সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করছেন। নদী বিনাশকারী বাঁধ ব্যারাজ ও তটবন্ধন তৈরির পরিকল্পনা এখনই বন্ধ করা উচিত বলে চন্দ্রশেখরম দাবি করেন।

মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধার গাঁধীবাদী সমাজ ও পরিবেশ কর্মী অশোক ভরত বলেন, ‘‘নদীর নীচেও নদী থাকে। বাঁধ ও টানেল দিয়ে তা নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে।’’ সভ্যতার বিকাশ ঘটাতে নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা মানব সভ্যতা ধ্বংস হতে চলেছে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। অশোকবাবুর দাবি, ‘‘অলকানন্দা, ভাগীরথী বরাবর উত্তরাখণ্ডে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল রয়েছে। বারবার গতিপথ বাধা পেয়ে পটনা, কানপুর, হরিয়ানাতেও গঙ্গায় জল কমেছে।’’

Advertisement

কলকাতার ‘নদী বাঁচাও, জীবন বাঁচাও’ আন্দোলনের কর্মী তাপস দাস মনে করেন, দেশে একটি নদী-নীতি থাকা দরকার। তিনি জানান, বালুরঘাটে আত্রেয়ীর জলসঙ্কট রয়েছে। এটাও জানান তিনি, যে বাংলাদেশের কুটনীতিও এর আড়ালে রয়েছে। একই ভাবে উত্তরবঙ্গে তিস্তা, অসমে ফেনি, ত্রিপুরায় গোমতী নদীর জলনীতি কী হবে সেই প্রশ্ন তোলেন তাপসবাবু। রাজনৈতিক দলগুলির কোনও পরিবেশ শাখা সংগঠন নেই কেন সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।

রাজ্যের বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলেন, ‘‘একটি নদীর সমস্যা নিয়ে তৈরি নদীসভা থেকে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে একজন করে প্রতিনিধিকে যুক্ত করে সমবেত ভাবে তৈরি হবে নদীসভা। এই নদীসভার প্রতিনিধিদের একত্রিত করে সারা দেশ জুড়ে গড়া ওই ‘নদী লোকসভা’ সরকারের কাছে নদী রক্ষার বিষয় তুলে ধরবে।’’ জেলার আঙিনা পাখি ও পরিবেশ সুরক্ষা কমিটির উদ্যোগে বালুরঘাটের সুবর্ণতট সভাগৃহে আয়োজিত দু’দিনের আলোচনা সভার উদ্বোধন করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সদস্য বিপ্লব মিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন