পঞ্চায়েতের ত্রাণশিবিরে যেতে রাজি নন জলবন্দিরা

দুর্গতদের দাবি, গত বছরে বন্যার সময় থেকে তাঁদের অভিজ্ঞতা, ঘর ছেড়ে শিবিরে গেলে রাতের অন্ধকারে ঘরে থাকা যাবতীয় সামগ্রী লুট হয়ে যেতে পারে। সেই ভয়েই বেশির ভাগ পরিবার ঘরে কাছেই উঁচু মাচা করে থাকছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পারদেওনাপুর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:১১
Share:

বন্দি: জল ভেঙেই পানীয় জলের সন্ধানে প্লাবিত লীলারামটোলার বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গার জলস্তর বেড়ে চরম বিপদসীমার কাছাকাছি চলে আসায় পারদেওনাপুর-শোভাপুর ও মানিকচক পঞ্চায়েতের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হল। রবিবার বিকেলে জলস্তর বেড়ে হয়েছে ২৫ মিটার। যা চরম বিপদসীমার চেয়ে মাত্র ০.৩ মিটার কম। তবু পঞ্চায়েতের ত্রাণ শিবিরে এখনও আসতে চাইছেন না বাসিন্দারা। দুর্গতদের দাবি, গত বছরে বন্যার সময় থেকে তাঁদের অভিজ্ঞতা, ঘর ছেড়ে শিবিরে গেলে রাতের অন্ধকারে ঘরে থাকা যাবতীয় সামগ্রী লুট হয়ে যেতে পারে। সেই ভয়েই বেশির ভাগ পরিবার ঘরে কাছেই উঁচু মাচা করে থাকছেন।

Advertisement

কালিয়াচক ৩ ব্লকের বিডিও খোকন বর্মণ বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। কিন্তু ওঁদের ঘরের নিরাপত্তা যাতে দ্রুত নিশ্চিত করে ওঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনানো যায় সে ব্যাপরে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করছি।’’

এ দিকে সেচ দফতরের কর্তাদের আশঙ্কা, গঙ্গা চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বইলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে পড়বে। একেই শনিবার পারদেওনাপুরে পারঅনুপনগর থেকে পারলালপুর পর্যন্ত বোল্ডার পিচিংয়ের কাজের প্রায় ৭০ মিটার অংশ জলের তোড়ে ভেঙে বসে গিয়েছে। জল আরও বাড়লে পুরো কাজটি টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হয়ে পড়বে।

Advertisement

কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারদেওনাপুর পঞ্চায়েতের গোলাপমণ্ডলপাড়া, পারপরাণপাড়া, পারঅনুপনগরের ঘরে ঘরে কোমর সমান জল উঠেছে। চরসুজাপুর-পারলালপুরের রাস্তার ধারে প্রচুর পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। কেউ ত্রিপল দিয়ে শেড করে রয়েছেন, কারও ত্রিপল না থাকায় রাস্তার ধারে বেঁধে রাখা নৌকোয় করেই খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন। পঞ্চায়েতের বাকি সংসদগুলিতেও জল বাড়ছে।

পতিরাম চৌধুরী, মহাবীর চৌধুরীরা বলেন, ‘‘গত বছরে পারলালপুর হাই স্কুলে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। কিন্তু জল কমলে বাড়ি ফিরে দেখি, দুষ্কৃতীরা টিনের ঘরের দেওয়াল কেটে নিয়ে যাবতীয় আসবাব নিয়ে চলে গিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই ঘর ছেড়ে যাওয়া যাচ্ছে না।’’ তাঁদের অভিযোগ, প্রায় ১০ দিন ধরে তাঁরা জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। অথচ এক দিন পঞ্চায়েতের তরফে একটি করে ত্রিপল, শাড়ি ও সামান্য চাল দিয়ে যাওয়া হলেও আর কোনও ত্রাণ মিলছে না। বন্যার জেরে কাজকর্ম কিছুই নেই, এই অবস্থায় ত্রাণ না পেলে না খেয়েই কাটাতে হবে।

পঞ্চায়েত প্রধান সুস্মিতা রবিদাস অবশ্য বলেন, ‘‘ব্লক প্রশাসন থেকে যে ত্রাণ মিলেছিল তা বিলি করা হয়েছে। দুর্গতদের ত্রাণ শিবিরে আসার জন্য বলা হচ্ছে। ওঁরা এলে খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু ওঁরা তো শিবিরে আসছেনই না।’’

এ দিকে গঙ্গার জলোচ্ছাসে প্লাবিত মানিকচক ব্লকের জোতপাট্টা, রবিদাসপাড়া, শিবনটোলা, রামনগর গ্রামগুলিতেও জল ঢুকে পড়েছে। সেখানেও ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে।

রীতিমতো ফুঁসছে মহানন্দাও। জলস্তর এ দিন ২০.৫ মিটার অতিক্রম করায় ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহে নদীর পাড় সংলগ্ন অসংখ্য বাড়িতে জল ঢুকে পড়েছে। ২১ মিটার হলে তাও বিপদসীমা ছাড়াবে।

ইংরেজবাজারের উত্তর ও দক্ষিণ বালুচর, মিশনঘাট কলোনি, কামারপাড়াঘাট, অরবিন্দকলোনি, হঠাৎ কলোনি, বড় কারখানা, সদরঘাট, সুকান্তপল্লির অনেক পরিবারই ঘরের আসবাব নিরাপদ জায়গায় সরানো শুরু করেছেন। অনেকে এলাকার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। ত্রিপল টাঙিয়ে পরিবার নিয়ে সেখানে থাকছেন। সেখানেও ত্রাণ মিলছে না বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন