ক্যামেরার জ্বালায় অতিষ্ঠ পাখি

ভোর হতেই দলে দলে শৌখিন, পেশাদার আলোকচিত্রীরা নৌকা ভাড়া করে বিরল হাঁসের ছবি তুলতে তোলপাড় করছেন তিস্তার জল। গজলডোবার একাধিক মাঝির আক্ষেপ, ‘‘ফটোগ্রাফারদের জ্বালায় পরিযায়ীরা দু-দণ্ড এক জায়গায় তিষ্ঠোতে পারছে না।’’

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫২
Share:

পরিযায়ী: গ্রেটার স্কাউপের জলবিহার। নিজস্ব চিত্র

ফুলবাড়ি থেকে গজলডোবা, পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা শুরু শুরু হলেও আগের তুলনায় রকমারি প্রজাতির পাখির দেখা মিলছে না। ফলে, আগের তুলনায় পরিযায়ীর সংখ্যাও কমছে। সে জন্য পরিবেশপ্রেমীদের একাংশ দূষছেন পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্রের কাছে লাগাতার নৌকাবিহারকে। কেউ অভিযোগ করছেন, গজলডোবায় তিস্তার কাছেই দিনরাত মেগা ট্যুরিজম হাবের নির্মাণ কাজের জন্য নির্জনতা থাকছে না। তাতেই নির্জনতা প্রিয় পরিযায়ীরা মুখ ফেরাচ্ছে।

Advertisement

এরই মধ্যেই অবশ্য আশার আলো দেখাচ্ছে বিরল প্রজাতির কিছু পরিযায়ীর আচমকা আগমন। তা জানাজানি হওয়াতেও আরেক বিপত্তি। ভোর হতেই দলে দলে শৌখিন, পেশাদার আলোকচিত্রীরা নৌকা ভাড়া করে বিরল হাঁসের ছবি তুলতে তোলপাড় করছেন তিস্তার জল। গজলডোবার একাধিক মাঝির আক্ষেপ, ‘‘ফটোগ্রাফারদের জ্বালায় পরিযায়ীরা দু-দণ্ড এক জায়গায় তিষ্ঠোতে পারছে না।’’

যেমন, গত বছর গজলডোবায় বিন গুজের উপস্থিতি টের পাওয়ায় পাখিপ্রেমীদের মধ্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। এ বারও তেমন গজলডোবায় ‘গ্রেটার স্কাউপ’ প্রজাতির হাঁসের দেখা মিলেছে। উত্তর আমেরিকায় যে হাঁস ‘ব্লু-বিল’ নামেই পরিচিত। সেই হাঁস গজলডোবায় দেখা গিয়েছে বলে বন দফতর ও হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন জানতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, এ বার গজলডোবায় ‘ব্ল্যাক নেকড গ্রিবি’ ও ‘স্মিউ’ প্রজাতির হাঁসের দেখাও মিলেছে বলে বন দফতর জেনেছে। বন দফতর চলতি মাসেই ফের পাখিসুমারির কাজে নামছে। সেই সময়ে গজলডোবায় নবাগত তিনটি পাখির বিষয়ে আরও তথ্য-ছবি জোগাড় করতে চাইছে বন দফতর।

Advertisement

ন্যাফের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘গ্রেটার স্কাউপ প্রজাতির হাঁস বহু আগে গজলডোবায় দেখা যেত। সেটা এবার কোনও কারণে এদিকে ঢুকে পড়েছে বলে একজন পাখিপ্রেমী জানিয়েছেন। ব্ল্যাক নেকড গ্রিবি’ ও ‘স্মিউ’ প্রজাতির হাঁসও এসেছে শুনেছি।’’ স্থানীয় মাঝিদের সচেতন করেছেন অনিমেষবাবুরা। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, ‘‘নারারথলি, ফুলবাড়ি, রসিকবিল, বক্সাতেও ছবি তোলার নামে পাখিদের উত্ত্যক্ত করা রুখতে স্থানীয়দের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’’

তবে গজলডোবায় নির্মাণের জন্য পরিযায়ীদের ক্ষতির কথা মানতে চাননি পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি জানান, পরিবেশ দূষণ বিধি মেনে পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে নির্মাণ কাজ হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন